নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০৬:৫৫ পিএম
ছবি কোলাজ: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
শীত মানেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল আর ঠান্ডা হাওয়া। এই সময় আমাদের শরীরে সহজেই ঠান্ডা অনুভব হয়, হাত-পা জমে যায়, অনেক সময় সর্দি-কাশির সমস্যা বেড়ে যায়। কিন্তু জানেন কি, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য একটি বিশেষ প্রক্রিয়া আছে, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় থার্মোজেনেসিস।
সহজভাবে বলতে গেলে, যখন আমরা এমন কিছু খাবার খাই যা হজম হতে বেশি সময় নেয়, তখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ, আমাদের শরীর নিজে থেকেই ভিতর থেকে গরম হতে থাকে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবার এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর। শীতকালে এই ধরনের খাবার খেলে শরীর গরম থাকে, শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘ সময় সতেজ থাকা যায়।
তাহলে চলুন জেনে নিই শীতকালীন ৫টি সুপারফুড, যা শুধু শরীর গরম রাখবে না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং শীতের দিনগুলোকে করে তুলবে আরও স্বস্তিদায়ক ।
স্যুপ হলো শীতকালীন খাবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকর উপায়। টমেটো, গাজর, ব্রোকলি বা মিক্সড ভেজিটেবল দিয়ে তৈরি এক কাপ গরম স্যুপ শরীরকে ভিতর থেকে সতেজ রাখে। এটি শুধু শরীর গরম রাখার জন্য নয়, সেই সাথে ভিটামিন, মিনারেল এবং হাইড্রেশনও দেয়। সকাল বা সন্ধ্যায় গরম স্যুপ খেলে ক্লান্তি কমে যায়। চাইলে এতে আদা বা রসুন যোগ করতে পারেন, যা শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়ায়। অলিভ অয়েল বা হালকা মাখন মেশালে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়। এখানেই থার্মোজেনেসিস কাজ করে। কারণ সবজি, প্রোটিন এবং হালকা ফ্যাট হজম হতে বেশি সময় নেয়, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

শীত মানেই হট ড্রিঙ্কসের সময়। এক কাপ গরম চা বা কফি শরীরকে দ্রুত গরম করে। বিশেষ করে আদা চা, যা শুধু গরম রাখে না, সর্দি-কাশি প্রতিরোধেও সাহায্য করে। চা বা কফিতে দারচিনি বা লেবুর রস মেশালে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক মধু যোগ করলে শরীরের জন্য আরও উপকারী হয়। হট ড্রিঙ্কসের মাধ্যমে থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ, হজম প্রক্রিয়ার সময় শরীর নিজ থেকে তাপ উৎপন্ন করে, যা শীতের ঠান্ডা মোকাবিলায় কার্যকর।

বাদাম ও সিডস, যেমন আখরোট, কিশমিশ, সূর্যমুখী বীজ, শরীরকে ভিতর থেকে গরম রাখে এবং শক্তি যোগায়। হালকা রোস্ট করে দিনে এক চামচ খেলে শরীরের এনার্জি বাড়ে এবং মন ভালো থাকে। শীতকালে সকালের নাস্তা বা বিকেলের হালকা স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম ও সিডস অত্যন্ত উপকারী। এগুলোতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার দীর্ঘ সময় শরীরকে সতেজ রাখে। এই ধরনের খাবার হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, যা শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখে।

শীতকালে ডার্ক চকলেট খাওয়া শুধু মজার নয়, এটি শরীরকে ভিতর থেকে গরম রাখে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সকালের নাস্তা বা বিকেলের হালকা খাবার হিসেবে একটি বা দুটি চকলেট স্লাইস শরীরকে ফুরফুরা রাখে এবং মুডও ভালো রাখে। তবে অবশ্যই ৭০% বা তার বেশি কোকোযুক্ত ডার্ক চকলেট বেছে নিন। অতিরিক্ত চিনি যুক্ত চকলেট এড়িয়ে চলুন। ডার্ক চকলেট হজম হতে বেশ সময় নেয় এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা শীতকালীন উষ্ণতা বজায় রাখে।

ওটস শীতকালীন সকালের জন্য একদম আদর্শ একটি খাবার। এতে দারচিনি, বাদাম বা শুকনো ফল মেশালে শরীরের এনার্জি আরও বাড়ে। এটি শুধু শরীর গরম রাখে না, পেটও পূর্ণ রাখে এবং ধীরগতির এনার্জি দেয়। চাইলে গরম দুধ বা হালকা মধু মেশানো যেতে পারে, যাতে এটি আরও পুষ্টিকর হয়। ফল যোগ করলে ফাইবার ও ভিটামিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে ওটমিলের হজম প্রক্রিয়ার কারণে থার্মোজেনেসিস সক্রিয় থাকে, ফলে দীর্ঘ সময় শরীর গরম থাকে।
এছাড়া তাজা সবজি ও ফল যেমন কমলা, পেয়ারা, আপেল ও শাকসবজি শরীরকে পুষ্টি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হালকা ব্যায়াম: যেমন ওয়াকিং বা যোগ ব্যায়াম, শরীরকে ভিতর থেকে গরম রাখে এবং এনার্জি বাড়ায়।
পর্যাপ্ত পানি পান: শীতের সময় অনেকেই কম পানি পান করে। নিয়মিত হালকা গরম পানি পান করুন।
সময়মতো হালকা খাবার: গরম স্যুপ বা হট ড্রিঙ্কস শরীরকে সতেজ রাখে।
গরম স্যুপ, হট ড্রিঙ্কস, বাদাম ও সিডস, ডার্ক চকলেট এবং ওটমিল—এই পাঁচটি সুপারফুড আপনার শীতকালীন রুটিনে অবশ্যই থাকা উচিত।
তাই শীতের দিনে শুধু ঠান্ডা এড়ানো না, বরং শরীরকে স্বাস্থ্যকর ও চাঙ্গা রাখতে এই খাবারগুলোর উপর ভরসা রাখতে পারেন।