আইসক্রিম শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৭, ২০২২, ০৯:৩৭ পিএম

আইসক্রিম শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়  : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

গরমে আইসক্রিম প্রেমীদের জন্যে দুসংবাদ। প্রচন্ড গরমে আইসক্রিম শরীরে আরো বেশি গরম তৈরি করে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। দেশের চলমান তাপপ্রবাহে সাধারণ জনগণের কী করণীয়, তাপপ্রবাহের কারণে কেউ হিট স্ট্রোক করলে প্রাথমিক চিকিৎসা কী দেওয়া যেতে পারে এমন নানান বিষয় নিয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপ করেন তিনি।

https://www.youtube.com/watch?v=dIVYPl9iXgw
 

তাপপ্রবাহে জনসাধারণের করণীয় কি?

তাপপ্রবাহের সময় রোদে না গিয়ে ছায়া বা শীতল জায়গায় থাকতে হবে। আর পানির কোন বিকল্প নেই। তাই এই সময়ে প্রচুর পানি পান করা দরকার। তবে যদি বেশি দুর্বল বা খারাপ লাগে তাহলে ওরাল স্যালাইন এই সময়ের উপযোগী।

তাপপ্রবাহ থেকে বাড়তি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?

সরাসরি সূর্যের নিচে যাদের কাজ করতে হয় তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই তাপপ্রবাহের সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময় যখন তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই সময়টাতে বাইরের কাজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। ঘরের ভেতরে বা ছায়া আছে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করতে হবে।

প্রচুর পানি এবং তরল পানীয়- যেমন শরবত, ডাব, ফলের রস পান করতে হবে। যতবার সম্ভব গোসল করুন। বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিন।ঢিলেঢালা এবং বাতাস পরিবহনকারী পোশাক পরুন। ঘরের বাইরে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

চা কফি কি গরমে ক্ষতি করে ?

তাপ প্রবাহের সঙ্গে চা কফি খাবার কোন সম্পর্ক নেই। তবে কেউ তাপ প্রবাহে ভুগলে তার চা কফি না খাওয়াই ভালো। বেশি করে ঠান্ডা পানি খেতে হবে আর সাথে ওরাল স্যালাইন খেতে হবে।

এই গরমে আইসক্রিম, বারবার গোসল কতটা কার্যকর?

বারবার গোসল করা যেতে পারে কিন্তু গরমে আইসক্রিম শরীরে আরো বেশি গরম তৈরি করে। তাপপ্রবাহে আইসক্রিম হেল্পফুল না। প্রচন্ড গরমে আইসক্রিম শরীরে আরো বেশি গরম তৈরি করে

হিট স্ট্রোক কি ?

হিট স্ট্রোক এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার হচ্ছে অধিক মাত্রা, আর থার্মিয়া মানে তাপ। শরীরে অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই বলা হয় হিট স্ট্রোক।  আমাদের শরীরের ভেতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু একটানা রোদে থাকলে গরমে ঘামের সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়।

শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়। ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যাওয়াতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে শরীরকে করে তোলে অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত।

এতে মাথাঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যুও হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বাচ্চা, বয়স্ক ও যারা ওবেসিটিতে ভুগছে তারা হিট স্ট্রোকে সহজেই আক্রান্ত হয়।

হিট স্ট্রোকের উপসর্গ?

হিট স্ট্রোক করলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায় আর সেই অজ্ঞানের সময় ভয় থাকে মৃত্যুর। সাধারণত হিট স্ট্রোক হওয়ার কিছু সময় আগে শরীরে অত্যধিক তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ঝিমুনি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি হয়। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে আরও কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন চামড়া লালচে হয়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, হাঁটায় অসুবিধা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, বমি, অসংলগ্ন কথাবার্তা বা আচরণ, ঘন ঘন শ্বাস, নাড়ির দ্রুত গতি, চোখের মণি বড় হওয়া, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা কি?

কেউ চোখের সামনে হেট স্ট্রোক করলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ইমারজেন্সিতে নিতে হবে কারণ তার ভাইটাল সাইন গুলো দেখতে হবে যেমন তার পাল্স ব্লাড প্রেসার হার্ড রিস্পন্দন আছে কিনা সেগুলো দেখতে হয়। হাত পা মেসেজ করব পানি দিয়ে মুছে দিব স্পঞ্জ করে দিব শরীর এরপর ইমারজেন্সিতে নিব।

গরমে কি কি রোগ বাড়তে পারে?

সাধারণত গরমে হিট স্ট্রোক হয় । কারো কারো ডায়রিয়া হয়, কারো কারো ইলেকট্রোলাইট ইন ব্যালেন্স হয় কাজে-কর্মে উৎসাহ থাকে না , মানুষ তখন ঝিমিয়ে থাকতে পছন্দ করে।

এই মুহুর্তে কতটা প্রস্তুত হাসপাতালগুলো?

চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত উন্নত। আমাদের দেশে আমরা সব ধরনের চিকিৎসা দিতে পারি। আমরাও তাপদাহে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে কিংবা হিটস্ট্রোক করলে আমাদের হাসপাতালগুলো সেই চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ আরো দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী ১৮ জুলাইয়ের (সোমবার) পর সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। একই সময়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরটি।

Link copied!