আঙ্গুল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, গোসলের সময় দেখা গেল পেটের পুরো অংশে সেলাই

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ০৪:৫৬ পিএম

আঙ্গুল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, গোসলের সময় দেখা গেল পেটের পুরো অংশে সেলাই

নয় মাস বয়সের সময় চুলার আগুনে পুড়ে যায় পাঁচ বছরের মেয়ে মাইশার ডান হাতের আঙ্গুল।ওই সময় রংপুরে চিকিৎসা করে হাতের ক্ষত ভালো হলেও কুঁকড়ে যায় মাইশার ডান হাতের তিন আঙুল। এমতাবস্থায় উন্নত চিকিৎসার আশায় মাইশার বাবা মোজাফফর তাকে নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডাক্তার মো. আহসান হাবীবের কাছে। চিকিৎসকও বলেছেন, ‘অপারেশন করলে স্বাভাবিক হবে’।

ওই চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালেরাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে হাতের অপারেশন হয় মাইশার। অস্ত্রোপচারের ঘরে ঘণ্টা দেড়েক রাখার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ মাইশার অবস্থা খারাপ। তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার জন্য গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে হবে।’

চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী হতবিহ্বল বাবা-মা ছোট্ট মেয়েটিকে মিরপুর-১ মাজার রোডের সেই হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় মাইশা মারা গেছে। তবে কারণ না জানিয়ে

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের জন্য নেয়া টাকা ফিরিয়ে দেয় মাইশার বাবা-মাকে। লাশ বাড়িতে আনতে ঠিক করে দেয় অ্যাম্বুলেন্সও। বাড়ি ফিরে যখন ছোট্ট মাইশাকে দাফনের জন্য গোসল করানো হবে, তখন গোসল করানো নারীরা দেখতে পান মাইশার নাভির নিচে পেটজুড়ে কেটে সেলাই করা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা গুঞ্জন।

এসময় স্বজনরা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ ঢাকায় অপারেশন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার পরামর্শ দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে নিরুপায় স্বজনরা শিশুটিকে বাড়ির আঙিনায় দাফন করে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ার মোজাফফর আলী ও বেলি আক্তার দম্পতির মেয়ে মারুফা জাহান মাইশা। নানা ওসমান গণি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।


শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগীর বাবা-মা অনলাইন নিউজ পোর্টাল-বাংলা ট্রিবিউন ডটকমকে এসব তথ্য জানান।

এই বিষয়ে মাইশার বাবা বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল ঠিক করার জন্য ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীবের কাছে যাই। তিনি সবকিছু দেখে বলেন, বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে অপারেশন করা হবে। রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল মেডিক্যালে তার শেয়ার আছে জানিয়ে বলেন, সেখানে অপারেশন করালে খরচ কম লাগবে। বুধবার সেখানে হাতের অপারেশন করার সময় মেয়ে মারা যায়। পরে তারা আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে ধমকিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে এসে মেয়েকে গোসল করার সময় স্থানীয় মহিলারা দেখেন, মেয়ের তলপেটের পুরো অংশ সেলাই করা।’

দিনমজুর মোজাফফর বলেন, ‘আমরা এটা দেখে নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি না। হাত অপারেশন করাতে গিয়ে তারা কেন আমার মেয়ের পেট কাটলো তা জানি না। আমাদের কোনও কাগজপত্রও দেওয়া হয়নি।’

মাইশাকে গোসল করানো মফিজা খাতুন বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল কাটা ছিল। পরে গোসলের সময় দেখতে পাই ওর নিচ পেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা। পরে সবাইকে জানাই।’

মাইশার মা বেলি বলেন, ‘আমি কী ভুল করলাম! কেন মেয়েকে নিয়ে গেলাম। ওরা ডাক্তার না, কসাই। আমার মেয়ের পেট কাটলো কেন? ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’

 

পরিবারের পক্ষ থেকে ডা. আহসান হাবীবের একটি ভিজিটিং কার্ড দেয়। ওই কার্ডের নম্বর ধরে কল করা হলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ডা. আহসান হাবীব বলে দাবি করেন। মাইশার অপারেশন ও মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অপারেশন করিনি। আমার শেয়ার থাকা আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অপারেশন অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছিলাম। সেখানে ঢাকা মেডিক্যালের প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক (সহকারী অধ্যাপক) ডা. শরিফুল ইসলাম অপারেশন করেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত শিশুটি মারা যায়। আমি নিজেও এ ঘটনায় শক্ড (হতবাক)।’

Link copied!