ইউক্রেন যুদ্ধের লাভালাভ: কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৯, ২০২২, ০২:৪৪ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধের লাভালাভ: কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ!

বছর ঘুরতে শুরু করল ইউক্রেন যুদ্ধের। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী হামলা শুরু করে দেশটিতে। প্রথম কয়েক মাসে বেশ সাফল্যও পায় রুশ বাহিনী। তবে পশ্চিমাদের সামরিক সহযোগিতার কারণে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন তো বটেই, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন অর্থনৈতিক সর্বনাশা দেখা দিয়েছে।

তবে বিপরীত চিত্রও আছে। এই যুদ্ধের আগুনে গা গরম করে নিচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশ। এসব দেশের অর্থনীতি এখন ফুলে ফেঁপে উঠছে। আটলান্টিকের ওপারে আমেরিকাসহ ইউরোপের জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্রের অস্ত্রবাজার এখন চাঙ্গা।

বিশ্বের প্রধান ব্যবসাগুলোকে মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। অস্ত্র, ওষুধ ও জ্বালানি তেল ও গ্যাস। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অস্ত্র বেচতে দরকার যুদ্ধ। ওষুধ বেচতে ওই শিল্পের দরকার রোগ-মহামারি। আর তেল কোম্পানিগুলোর দরকার যে কোনোভাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়ানো যাতে বেশি মুনাফা হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের বাজার রমরমা। গত এপ্রিলের প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ভারী অস্ত্রসহ ইউক্রেনে নিরাপত্তা সহায়তার জন্য ১২০ কোটি মার্কিন ডলার অনুমোদন দেয়। সব মিলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে মার্কিন সামরিক সহায়তা ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। পেন্টাগন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে তাদের স্টক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক, অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দিচ্ছে। বিনিময়ে কিয়েভের কাছ থেকে নিচ্ছে শত কোটি ডলার। এই অস্ত্র বেচায় পিছিয়ে নেই ইউরোপের অন্য দেশগুলোও।

অথচ ইউক্রেন-রাশিয়ার পক্ষ থেকে নেওয়া শান্তি উদ্যোগগুলোকে সফল করতে কোনো ভূমিকা নেয় না যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর অস্ত্রব্যবসায়ী মিত্ররা। বরং শুরু থেকেই তাঁরা শান্তি আলোচনা নিয়ে অনিচ্ছুক। অস্ত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই তাদের শান্তি আলোচনায় এমন অনিহা।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রতিবেশী তিনটি দেশ পাচ্ছে তাৎক্ষণিক আর্থিক লাভ। রাশিয়ার দক্ষিণ সীমান্তে মাত্র ৩৭ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট এক দেশ জর্জিয়া। দেশটির ভাগ্য বদলে দিচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে অভিবাসী হয়ে জর্জিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন হাজারো রুশ নাগরিক। তাঁরা যাওয়ার সময় নিজেদের সমুদয় অর্থকড়ি, অস্থাবর সম্পদ নিয়ে যাচ্ছেন জর্জিয়ায়। সেখানে তাঁরা কোম্পানি খুলে রীতিমত ব্যবসা শুরু করেছেন।

জর্জিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জর্জিয়ায় ১২ হাজার ৯৩টি নতুন রুশ কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে। এটি ২০২১ সালে নিবন্ধিত মোট প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জর্জিয়ার পাশাপাশি আর্মেনিয়া, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে।

পোনারস ইউরেশিয়া নামের একটি গবেষণা গ্রুপের পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া থেকে বেরিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের প্রায় এক–চতুর্থাংশ জর্জিয়ায় ঠাঁই নেয়। অবশিষ্ট রুশ অভিবাসীদের অধিকাংশই পাড়ি জমান তুরস্কে, যা শতকরা হিসাবে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া আর্মেনিয়ায় ১৫ দশমিক ১ শতাংশ ও অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছেন ১৯ শতাংশ রুশ নাগরিক।

রুশ অভিবাসীদের আগমন জর্জিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এতে কোভিড–১৯ এর জেরে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি আবার চাঙা হয়ে উঠছে। এ বছর এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে জর্জিয়ান মুদ্রা লারির বিনিময় হার ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী তুরস্ক এ বছর ১ লাখ ১৯ হাজার রুশকে দেশে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে। আর্মেনিয়ায়ও গেছেন ৭০ হাজারেরও বেশি। এসব রুশ নাগরিকদের আগমনে দেশগুলোর লেনদেন বেড়ে গেছে প্রায় ৩০ ভাগ।   

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ নাগরিকদের আগমনে জর্জিয়ার আবাসন মার্কেটে বড় ধরণের প্রভাব পড়েছে। জর্জিয়ান ব্যাংক টিবিসি জানায়, রাজধানী তিবিলিসিতে গত সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় আবাসনের দাম ২০ শতাংশ ও লেনদেন ৩০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ৭৪ ভাগ বেড়েছে বাড়িভাড়াও।

Link copied!