এলাকায় দোকান খুলতে মনোরঞ্জন লাগে চিত্তরঞ্জনের!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১, ০৪:০৪ এএম

এলাকায় দোকান খুলতে মনোরঞ্জন লাগে চিত্তরঞ্জনের!

রাজধানীর রাজারবাগ ও সবুজবাগ অঞ্চলে কেউ যদি দোকান খোলেন বা সংস্কার করতে চান তার জন্য অনুমতি নিতে হয় ৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাসের কাছ থেকে। শুধু তাই নয় কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকেই তার অনুমতি বা তাকে চাঁদা দেওয়া ছাড়া কেউ ওই এলাকায় দোকান খোলা বা সংস্কার করতে পারতেন না। এমনকি নারীদের কাছ থেকে ‘মনোরঞ্জনও’ দাবি করতেন এই কাউন্সিলর!

অনুমতি নেওয়ার সময় তিনি বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন অংকের চাঁদা তোলেন। দাবিমত চাঁদা না দিতে পারলে তাকে দোকান সংস্কার করতে দেওয়া হয় না। সম্প্রতি এক নারীর সাথে চিত্তরঞ্জন দাসের যে ভাইরাল ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভুক্তভোগীও ওই চাঁদাবাজির শিকার। তিনি সেদিন তার ওপর ধার্য চাঁদার পরিমাণ কমাতে গিয়েই যৌন হয়রানির শিকার হন। চাঁদার পরিমান কমাতে তাকে রুমে ডেকে রুমের দরজা আটকিয়ে দেন কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে এ ঘটনা তুলে ধরেন ভুক্তভোগী সেই নারী। তিনি বলেন, ’আমাদের বাসার পাশে এক চাচার চায়ের দোকান আছে। উনি ওই দোকানটি বড় করবেন বলে কাউন্সিলরের কাছে অনুমতি চাইতে গিয়েছিলেন। তখন কাউন্সিলর তার কাছে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা সব সময় ওই দোকানে যাতায়াত করি বলে আমাদের কাছে চাচা বিষয়টি জানান। যদি আমরা চাঁদার পরিমানটা একটু কমিয়ে দিতে পারি।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, সে ব্যাপারে কথা বলতে যাওয়ার জন্য আমি কাউন্সিলরকে ওই দিন রাত পৌণে আটটার দিকে তার ফোনে কল করি। তখন তিনি আমাকে জানান, এখন না এসে রাত ৯টা সাড়ে নয়টার দিকে যাওয়ার জন্য। তারপর আমি আর আমার হাজবেন্ড রাত পৌনে ১০টার দিকে তার কার্যালয় যাই।

আমি গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করি যে তিনি চাঁদাটা চেয়েছেন কিনা। তখন তিনি আমাকে জানান যে, তিনি চাঁদা চেয়েছেন। তখন আমি বললাম যে দাদা, উনি তো গরিব মানুষ। এতো টাকা দিতে পারবেন না। যদি টাকার পরিমাণটা একটু কমিয়ে দিতেন।

তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কত দিবো তুই বল। আমি যা বলবো সেটাই নির্ধারন করবে।’ তখন আমি তাকে বললাম ১৫-২০ হাজার টাকা যেনো তিনি রাখেন। তখন তিনি রাজি হয়ে আমকে বলেন, আমি যেনো পাশের রুমে গিয়ে বসি। তিনি কয়েকজনের সাথে কথা সেরে আসবেন।

পরে আমি ওই রুমে গিয়ে বসি। তার ঠিক ২ মিনিট পরে তিনি রুমে ঢুকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। তখন আমি সাথে সাথেই তাকে জিজ্ঞাসা করি, দরজা কেনো লাগাচ্ছেন তিনি! তখন তিনি আমাকে উল্টো জিজ্ঞাসা করেন, আমার কী লাগবে। তখন আমি বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি আমাকে আটকে রেখে অশ্লীল আচরণ শুরু করেন।’

ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, এ ঘটনার পর রাতেই থানায় গেলে থানা মামলা না নিয়ে উল্টো হুমকি দেয়। থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, অফিসারের সাথে কথা না বলে এ মামলা নেওয়া যাবে না। থানা আমাদেরকে এর পরদিন সকাল ১১টায় যেতে বলেন। পরে আমরা সকাল ১১টায় গেলে কোন কর্মকর্তাকেই থানায় দেখিনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তারা মামলাটি নেয়। কিন্তু এরপর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের কোন ধরনের পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। উল্টো মামলা নেওয়ার পর ওসি বের হয়ে আমাদেরকে বলেছেন, আমাদের ক্ষমতার চাইতেও নাকি পুলিশের ক্ষমতা অনেক বেশি।

তবে ভুক্তভোগী পরিবারের এই অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মু. মুরাদুল ইসলাম। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘আমরা মামলা নিয়েছি। সে অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আসামীকেও গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।’

অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে ৫নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার কার্যালয় ও বাসায় গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Link copied!