কর্মস্থলে ফেরা: ১২ ঘন্টা অপেক্ষাতেও দেখা মিলছে না ফেরির

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ৭, ২০২২, ০৭:৪৪ পিএম

কর্মস্থলে ফেরা: ১২ ঘন্টা অপেক্ষাতেও দেখা মিলছে না ফেরির

ঈদ ছুটি অনেকেরই শেষ। তাই তারা ফিরছে রাজধানীতে নিজ নিজ কর্মস্থলে। ফিরতি পথে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ঘাট থেকে আট কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যানবাহনের সারি তৈরি হওয়ায় শুক্রবার রাতে আসা গাড়িগুলো ১২ ঘণ্টার আগে ফেরির দেখা পায়নি। দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। অনেক যাত্রী ফেরিতে উঠে পড়ায় যানবাহন ওঠার সুযোগ পাচ্ছে কম।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় শনিবার সকালে দেখা গেছে, দুই ঘাটের ভিন্ন রকম চিত্র। দৌলতদিয়ায় যেখানে উপচেপড়া ভিড়, পাটুরিয়া ঘাট সেখানে অনেকটাই ফাঁকা। রাজধানী থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসা গাড়িগুলো সরাসরি ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। ঘাট এলাকায় কোনো গাড়িকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাট থেকে ছেড়ে আসে রো রো ফেরি ভাষাশহীদ বরকত। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি আর কিছু যাত্রী নিয়ে অনেকটা ফাঁকা ঘাট থেকে ছাড়ে ফেরিটি। ওই ফেরিতে করেই মানিকগঞ্জ নানাবাড়ি ঈদের বেড়ানো শেষে রাজবাড়ী গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন কলেজশিক্ষক নাসরীন আক্তার। তিনি বললেন, ঈদের দিন মা, বোন, ছেলেমেয়েসহ বেড়াতে যান তিনি। আজ সকালে পাটুরিয়া থেকে ফেরিতে ওঠেন তিনি। ঘাটে লোকজন কম থাকায় কোনো ভোগান্তিতেই তাঁকে পড়তে হয়নি।

অন্যদিকে, দৌলতদিয়া ঘাটে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। প্রতিটি ঘাটেই মানুষের ভিড়। এ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যাত্রীবাহী শত শত পরিবহন যানজটে আটকে আছ। ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের জমিদারব্রিজ পর্যন্ত যানজট প্রায় আট কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে গাড়ির সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে গতকাল রাত আটটায় ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী একটি বাসের চালক মো. মামুন আজ বেলা ১১টার দিকে বলেন, গতকাল রাত ১১টা থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে ঘাটের জ্যামে আটকে আছেন তিনি। যাত্রীরা সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

যশোরের চৌগাছা থেকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রওনা দিয়ে রাত ১০টার দিকে ঘাট থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পেছনে আটকা পড়ে সোনালী পরিবহন নামের একটি বাস। বাসটির সুপারভাইজার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে আছি। অনেকের আজ সকালে অফিস করার কথা। অনেকে অফিস ধরতে পারছেন না।’

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা একটি পরিবহনের যাত্রী মো. জাহিদ হোসেন জানান, তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আজ সকাল আটটার দিকে তাঁর অফিসে থাকার কথা। কিন্তু যানজটের কারণে সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না।

দৌলতদিয়া ঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, ঈদ শেষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কর্মস্থলের দিকে ছুটছেন। এ কারণে ঘাট এলাকায় এত চাপ পড়েছে। আগের দিন শুক্রবার রাতের গাড়ি এখনো পার হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২১টি ফেরি চলছে। ঈদ শেষে সবাই কাছাকাছি সময়ে ঢাকার দিকে ফেরায় ঘাটে যানবাহনের চাপ পড়েছে। এ কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ২৭টি যানবাহন পার হয়েছে, যা বিগত কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে মোটরসাইকেল পার হয়েছে আড়াই হাজার এবং ছোট গাড়ি ছিল প্রায় ছয় হাজার।

Link copied!