চার বছর বয়সে কথা বলেছিলেন আইনস্টাইন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৯, ২০২২, ০৫:২৯ এএম

চার বছর বয়সে কথা বলেছিলেন আইনস্টাইন!

পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মন্তব্য করেছিলেন, এমন এক দিন আসবে, যেদিন সময়ের কিংবা দুনিয়ার সম্পূর্ণ ইতিহাস লিখে ফেলা যাবে চার পৃষ্ঠায়, আর তার তিন পৃষ্ঠাজুড়ে থাকবে কেবল আইনস্টাইনের নাম।

আলবার্ট আইনস্টাইন মানব ইতিহাসের সব থেকে বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলা হয়। বিজ্ঞানে যার অবদান দুনিয়াব্যাপী সুবিদিত।

আইনস্টাইন এতোটাই মহান ও লোকপ্রিয় ছিলেন যে তিনি যখনি বাইরে বেরোতেন মানুষ তাকে রাস্তায় দাঁড়করে তার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করতেন।

আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ, জার্মানির এক ইহুদি পরিবারে হয়েছিলো। তার পিতার নাম হেরমান আইনস্টাইন ও মাতার নাম পৌলিন আইনস্টাইন।

আলবার্ট আইনস্টাইনের বাল্য জীবন রহস্য ও অলৌকিকতায় ভরপুর, আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্বাভাবিক ছিলোনা তার বাল্যকাল।

জন্মের সময় তারমধ্যে এমন একটি পার্থক্য ছিলো যা অন্য বাচ্চার থেকে তাকে আলাদা দেখাত। সেটি ছিল তার মাথার আকৃতি, আইনস্টাইনের মাথার আকার অন্য বাচ্চাদের থেকে আকারে বড়ো ছিল।

এ নিয়ে দারুণ এক গল্প আছে। চার বছর পর্যন্ত যখন তিনি কথা বলছিলেন না, তখন তাঁর মা-বাবার চিন্তার শেষ নেই। একদিন হঠাৎ খাবার টেবিলে নির্বাক আইনস্টাইন বলে উঠলেন, ‘স্যুপটা খুব গরম!’

মা–বাবা তো আকাশ থেকে পড়লেন, ‘এত দিন কথা বলোনি কেন?’

আইনস্টাইন জীবনের দ্বিতীয় বাক্যটি ব্যবহার করলেন এভাবে, ‘এত দিন তো সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল।’

কথা না হয় হলো, আইনস্টাইন পড়তেও শিখেছিলেন বেশ দেরিতে—সাত বছর বয়সে। ৯-১০ বছর বয়সেও কিছুটা থেমে থেমে কথা বলতেন। ফলে পরিবারের দুশ্চিন্তা কমছিল না। ভেবেছিলেন, ছেলেটার মাথা বুঝি আর খুলবে না। আশঙ্কাটা আরও পোক্ত হয়েছিল আইনস্টাইন বেজায় শান্তশিষ্ট লাজুক ছিলেন বলে। সমবয়সীদের থেকে একেবারেই আলাদা। খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপে তো মোটেও আগ্রহ ছিল না।

আইনস্টাইন বেঁচে থাকতেই তাঁর গণিতে ফেল করার গল্পটি মুখে মুখে রটে গিয়েছিল। এমনকি একসময় সংবাদমাধ্যমেও চলে আসে। অথচ আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘আমার বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগেই অন্তরকলন ও সমাকলন ক্যালকুলাস আয়ত্ত করেছিলাম।’ সুতরাং এ থেকে এটা অন্তত স্পষ্ট যে আইনস্টাইন আর যা–ই হোক গণিতে মোটেও কাঁচা ছিলেন না, ফেল করার প্রশ্ন তো আরও দূরের।

তবে তিনি যে কখনো কোনো বিষয়ে ফেল করেননি, তা বলা ঠিক হবে না। গণিতে তিনি বরাবরই ভালো করেছেন। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৬ বছর বয়সে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় গণিতে যথেষ্ট ভালো করলেও ভাষা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রাণিবিদ্যায় ডাব্বা মেরেছিলেন তিনি। পরীক্ষায় যা লিখেছিলেন, তাতে বেশ কিছু ভুলভাল ছিল। সুতরাং, আইনস্টাইনের গণিতে ফেল করার তথ্যটা মোটেও ঠিক নয়।

একবার আইনস্টাইন ট্রেনে সফর করছিলেন ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষন পরে টিটি এসে আইনস্টাইনের টিকিট দেখতে চাইলেন আইনস্টাইন তার টিকিট খুঁজতে থাকেন এবং সেটি খুঁজে না পাওয়া গেলে টিটি বলেন আমি আইনস্টাইনকে চিনি এবং আমি নিশ্চিত যে আইনস্টাইন টিকিট কেটেই ট্রেনে চড়েছেন, তিনি আইনস্টাইনকে কোন ফাইন না করেই চলে যান।

কিছুক্ষন পরে টিটি দেখেন আইনস্টাইন তখনো তার সিটের তলায় টিকিট টি খুজে যাচ্ছেন, টিকিট চেকার আবারও আইনস্টাইনের কাছে এসে বলেন আপনার টিকিট দেখতে হবেনা আপনি বসুন।

তখন আইনস্টাইন অবাক করে বলে ওঠেন, টিকিটটা যদি আমি খুঁজে না পাই তাহলে আমি বুঝবো কি করে আমি কোথায় যাচ্ছিলাম, এই কথা শুনে সহ যাত্রী সকলেই অবাক হয়ে যান এবং এটি অসাধারণ একটি মজার ঘটনা হিসেবে প্রচার হয়ে যায়।

আইনস্টাইন ভুল করতে কখনো ভয় পেতেন না, তার কথা ছিলো যে ব্যক্তি কখনও ভুল করেনি সে ব্যক্তি কখনো নতুন কিছু করার চেষ্টা করেনি।

আইনস্টাইন অনেক রকমের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন তার সকল পরীক্ষা একটির থেকে আরেকটি সম্পূর্ণ ভিন্ন হত, কারণ আইনস্টাইন মানতেন বারবার একইরকম পরীক্ষা করা আর আলাদা আলাদা ফলের আসা করা সবথেকে বড়ো পাগলামি।

আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেন এবং নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে তার অবদান অনেক। সবচেয়ে বিখ্যাত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলবিজ্ঞান ও তড়িচ্চৌম্বকত্বকে একীভূত করেছিল এবং আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অসম গতির ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্ব, কৈশিক ক্রিয়া, ক্রান্তিক উপলবৎ বর্ণময়তা, পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানের চিরায়ত সমস্যাসমূহ ও কোয়ান্টাম তত্ত্বে তাদের প্রয়োগ, অণুর ব্রাউনীয় গতির একটি ব্যাখ্যা, আণবিক ক্রান্তিকের সম্ভ্যাব্যতা, এক-আণবিক গ্যাসের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নিম্ন বিকরণ ঘনত্বে আলোর তাপীয় ধর্ম (যা ফোটন তত্ত্বের ভিত্তি রচনা করেছিল), বিকিরণের একটি তত্ত্ব যার মধ্যে উদ্দীপিত নিঃসরণের বিষয়টিও ছিল, একটি একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের প্রথম ধারণা এবং পদার্থবিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ।

তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার জন্য।

আজ আলবার্ট আইনস্টাইনের মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল মারা যান।

Link copied!