ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল রূপকার

হামজা রহমান (অন্তর)

জুলাই ২৭, ২০২২, ০৩:৫৭ পিএম

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল রূপকার

ছেলেবেলায় কুসুমকুমারী দাশের কবিতায় পড়েছি, "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?" কয়েক প্রজন্মের সবচাইতে পাঠ্য কবিতাগুলোর একটি এই 'আদর্শ ছেলে' শিরোনামের কবিতাটি। কবি এখানে আদর্শ ছেলের সন্ধান করেছেন যে ছেলে তার কর্মের মাধ্যমে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেবে। যার কথায় হয়তো 'কথায় কথায়' কথামালার ফুলঝুরি ঝরে না, যার চোখে হয়তো পাথরচাপা বেদনার নদী কেউ দেখে না, কিন্তু সে চোখে স্বপ্নজয়ের নেশা দোল খায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'নাদের আলী' তাকে তিনপ্রহরের বিল দেখানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলো, অঞ্জন তার গিটার হাতে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো তার বেলাকে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই কাজের মানুষ, তারা যা করতে পারে তাই বলে, তাই করে যা তার বলা হয়ে গেছে।

যেকোনো সভ্য দেশেই কথার চেয়ে কাজ বেশি চলে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বৈশ্বিক নানা সাফল্যের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের এই সাফল্যের মহান সম্রাজ্ঞী যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হন, তবে এই সাফল্যের সেনাপতির নাম সজীব ওয়াজেদ জয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসিহত অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এদেশের মুক্তিকামী মানুষের জয়ের আশায় যার নাম রাখা হয়েছিলো জয়! কবি কুসুমকুমারী দাশের 'আদর্শ ছেলে' যে কিনা কথার চেয়ে কাজ বেশি করে, সেই কাজের মানুষটাই সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথা রাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের বিস্ময়কর সাফল্যের নেপথ্য নায়ক। ভিশন-২০২১ বা ডিজিটাল বাংলাদেশের শুধু স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল রূপকারও তিনি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কী? এই প্রশ্নটা এখন কেউ আর করে না। কারণ সে জানে, এই প্রশ্ন সে যে ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে করবে, যে স্মার্টফোনের মাধ্যমে লিখবে, যে চায়ের দোকানে বসে বলবে, সেই ফেসবুক একাউন্ট, সেই স্মার্টফোন, সেই চায়ের দোকানে ইন্টারনেট চালিত যে টেলিভিশনটা চলছে, এসবই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এখন আর বিদ্যুৎ বিল কিংবা ট্যাক্স দেবার জন্য লাইন দিতে হয়না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের জন্য দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত ছোটাছুটি করতে হয়না, অজপাড়া গাঁয়ে পড়ে থাকা দুখিনী মায়ের মুখটা দেখার জন্য প্রবাসী ছেলেকে বছরের পর বছর অপেক্ষার যন্ত্রণা নিয়ে থাকতে হয়না।

একসময় জমির নামজারি করতে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো, আজকে যা ডিজিটাল সেবার আওতায় এসেছে। ৯৯৯- জাতীয় জরুরি সেবার মতো কার্যকরী সমাধান হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আমাদের তারুণ্য ডিজিটাল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচানোর সুযোগ পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মতো তাক লাগানো প্রজেক্ট সফলতা পেয়েছে। নগদ-বিকাশ কিংবা এটিএম কার্ডের মতো ক্যাশলেস টাকা লেনদেন, ই-কৃষি তথ্য, ই-স্বাস্থ্য সেবা, ই-পাসপোর্ট, ই-টেন্ডারিং, ই-ডকুমেন্ট, ই-গর্ভনেন্স, ই-ফাইলিং; এসবই আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।

আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের জনক সজীব ওয়াজেদ জয় শিক্ষাজীবনে ভারতের ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট’ থেকে জনপ্রশাসন বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বাবার মতোই কাজপাগল সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের গুণাবলি দেখিয়েছেন দলের সংকটকালে। ২০০৭-২০০৮ সালে দেশে যখন অনির্বাচিত ও জনবিচ্ছিন্ন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘মাইনাস টু’ ফরমুলার নামে 'মাইনাস শেখ হাসিনা' ফরমুলা বাস্তবায়নের অচেষ্টায় লিপ্ত ঠিক তখনই এ বিষয়টি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসূচির আয়োজন করেন তিনি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ সজীব ওয়াজেদ জয় মর্যাদার ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কার অর্জন করেন। যৌথভাবে তাকে এ পুরস্কারটি প্রদান করে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্লান ট্রিফিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং কানেক্টিকাটের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হেভেনের স্কুল অব বিজনেস। দেশের প্রথম কোনো ব্যক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম কর্তৃক ‘গ্লোবাল ইয়ং লিডার’ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে মাইক্রোপ্রসেসিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, রোবটিকস এবং সাইবার সুরক্ষায় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ফাইভ জি প্রযুক্তি চলে এসেছে এরই মধ্যে। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এই চারটি খাতে আমাদের  তরুণরা তাদের মেধাকে কাজে লাগনোর সুযোগ পাবে।

প্রযুক্তিখাতে এতো এতো সাফল্যের বিপরীতে বিপক্ষ মেরুর কয়েকটি ব্যর্থতা ও হতাশার ঘটনাও উল্লেখ করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্ক উঠিয়ে দেন, তথ্যপ্রযুক্তি যাতে করে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসে! বিভিন্ন স্কুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেবার উদ্দেশ্যে তৎকালীন সরকার নেদারল্যান্ডসের সাথে একটি চুক্তি করে যাতে অর্ধেক দামে কম্পিউটার কেনার কথা ছিলো। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেই এই চুক্তিটি বাতিল করেন, কারণ বিএনপির অতিজ্ঞানি নেত্রীর মাথায় ঢুকেছে সেই কোম্পানির নাম হচ্ছে টিউলিপ। এই কোম্পানির নামটি যেহেতু শেখ রেহানার মেয়ের নামে নাম, তাহলে এই কম্পিউটার আর কেনা যাবে না। দেশের জন্য আনতে চাওয়া কম্পিউটার তো গেলোই, টিউলিপ কোম্পানির মামলার কারণে ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিলো রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।

একইভাবে ১৯৯৬ সালের পর শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের সুযোগ আসলেও ক্ষমতা পরিবর্তনের পর বেগম জিয়া সরকারের কুশিক্ষিত নেতৃত্বের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের বিষয়ে তৎকালীন সরকারপ্রধান খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সাবমেরিন ক্যাবল বাস্তবায়ন হলে দেশের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে এবং তথ্য পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি এ উদ্যোগের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। একই সময়ে পৃথিবীর অনেক দেশ সাবমেরিনে যুক্ত হয়ে সুফল পাচ্ছিলো।

এসব ব্যর্থতা আর হতাশার গল্পকে পেছনে ফেলে 'কথায় নয় কাজে বড়' সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে প্রধান্য দেন তথ্যপ্রযুক্তিকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও একইসাথে সফল রূপকারের জন্মদিনে দেশের তারুণ্যের পক্ষ থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়কে শুভেচ্ছা জানাই। দেশের তারুণ্যের ছাইচাপা আগুনে তিনি যেভাবে প্রযুক্তির জোয়ার ছিটিয়ে দিয়েছেন, তার ফলস্বরূপ দেশের তরুণরা এখন বিশ্বজয়ের পথে। সজীব ওয়াজেদ জয় যদি আগামীতেও বড় আঙ্গিকে দেশের নেতৃত্ব দেন, আমাদের এ জয়রথ থামবে না ইনশাআল্লাহ, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।

লেখক: কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ছাত্রনেতা।

Link copied!