ডিসেম্বর-৬: বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ভারতের, পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

ডিসেম্বর ৭, ২০২২, ১০:৩৮ পিএম

ডিসেম্বর-৬: বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ভারতের, পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয় ভারত। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলার মধ্যেই ভারতের এই স্বীকৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এতে পিাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও চাঙা হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালায় মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পরপরই, পাকিস্তান ভারতের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

https://www.youtube.com/watch?v=MsBKi36HLsc

এদিন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন 'পূর্ব পাকিস্তানে' উপ-নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন সম্পাদন হওয়ার কথা ছিল।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর লাকসাম, আখাউড়া, চৌদ্দগ্রাম ও হিলিতে মুক্তিবাহিনীর দৃঢ় অবস্থানের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেটের আখাউড়া ও শমসেরনগর আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ডিসম্বরের এদিন মিত্রবাহিনীর বোমা হামলায় ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।

এদিন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশন, ভোরের বিরতি থেকে পালাতে শুরু করে। যশোর-ঢাকা মহাসড়কে মিত্র বাহিনীর ঘাঁটি থাকায় পাকবাহিনীর একদলকে মধুমতি নদী পার হতে হয় পলানোর জন্য। অপরদিকে, একটি দল কুষ্টিয়া হয়ে পালিয়ে যায়। তারা পালানোর সাথে সাথে সমস্ত সেতু ধ্বংস করার চেষ্টা করে।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (USSR) দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মার্কিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়।  একজন সোভিয়েত মুখপাত্র বলেছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন উপমহাদেশের যুদ্ধ সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত।

নিরাপত্তা পরিষদের ১১ সদস্য রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়। পোল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমর্থন করেলেও, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন ভোট দানে বিরত থাকে।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী বলেছিলেন যে, পাকিস্তানীরা ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। তিনি বিশ্বাস করেন, তাদের বাহিনী বর্তমান পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানকে ধরে রাখতে সক্ষম"।

ডিসেম্বরের এদিন, লেফটেন্যান্ট নিয়াজী তার বাহিনীকে ঝিনাইদহ থেকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার পাশাপাশি ঢাকাকেও রক্ষা করার নির্দেশ দেন এবং তিনি পাকবাহিনীদেরকে মেঘনার তীরে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যদিও মিত্রবাহিনী ঢাকা-যশোর মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া কারণে নিয়াজীর পরিকল্পনা অসম্ভব ছিল। মিত্র বাহিনীর একটি দল খুলনার দিকে অগ্রসর হয় এবং আরেকটি দল কুষ্টিয়ার দিকে অগ্রসর হযয়েছিলো।

১৯৭১ সালের এদিন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদেরকে দূর্বল কল্পনা করে পাকিস্তানিরা ঠিক যতটা বর্বরতা চালিয়েছিলেন তার অবসান যে খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে, তার পূবর্বাভাস তারাই যথাযথই পাচ্ছিলেন। তার জন্যই হয়তো নিয়াজী পাকবাহিনী এই পালিয়ে আসা বিষয়ক নির্দেশনা প্রদান করছিলেন।

 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক ও গবেষণা থেকে সংগৃহীত ঘটনাবলী নিয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের দর্শক ও পাঠকদের জন্য প্রতিবেদন সিরিজ ‘বিজয়ের দিনলিপি’ তৈরি করা হয়েছে। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের ইউটিউব চ্যানেলেও প্রতিবেদনটি ভিজুয়ালি দেখা যাবে।  

Link copied!