ডিসেম্বর-৮: বাংলাদেশে প্রবেশ করে জেনারেল জগজিৎ সিং ও তার সৈন্যরা

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ০৬:০৩ এএম

ডিসেম্বর-৮: বাংলাদেশে প্রবেশ করে জেনারেল জগজিৎ সিং ও তার সৈন্যরা

আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধ করতে বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ওদিকে ভারতের এই অবস্থানে নয়া দিল্লিকে হুমকি ধামকি দেয় ওয়াশিংটন।

১৯৭১ সালের এদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের তাদের হেড কোয়ার্টার ঢাকায় ফিরে যাওয়ারও উপায় ছিলো না।

https://www.youtube.com/watch?v=Ny0n7gv4auQ

মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তারা এদিন তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল জগজিৎ সিংকে তার সৈন্য নিয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে বলা হয়েছিলো। আবার, হালুয়াঘাট থেকেও একটি ব্রিগেডকে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হতে বলা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ডিসেম্বরের এদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান ও দেশটির  প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ দখলদার পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন যে আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সেনাদের সাথে আচরণসরূপ জেনেভা কনভেনশন অনুসরণ করা হবে। আকাশবাণী রেডিওতে বারবার প্রচারিত হচ্ছিল এই বার্তা।

এদিকে, ভারতীয় জেনারেল সাগত সিংয়ের সৈন্যরা পূর্ব সীমান্ত থেকে প্রবেশ করে এবং পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছিল। সৈন্যদের একটি দল আশুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হয় এবং অন্য দল আশুগঞ্জ ব্রিজে প্যেঁছায়।

১৯৭১ সালের এদিন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব মঞ্জুর করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এদিন ভঅরতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শ্রী সমর সেন বলেছিলেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিতে হবে। তার পাশাপাশি, উপমহাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করতে হবে।

এদিন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫৭তম পর্বত বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পৌঁছানোর আগেই পাকিস্তানি সেনারা জেলা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে, মেজর কে এম শফিউল্লাহের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক ব্রিগেড এস-ফোর্স কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই সরাইলে পৌঁছায়। সন্ধ্যাযর দিকে বিদ্রোহী ১১  ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আশুগঞ্জের পাশে আজমপুর এবং দুর্গাপুরে প্রবেশ করে।

২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং সৈন্যদের একটি ব্যাটালিয়ন সরাইল ও শাহবাজপুরের মধ্যে অগ্রসর হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩১১ তম মাউন্টেন ব্রিগেডের ১০ তম বিহার রেজিমেন্ট দুর্গাপুরের দক্ষিণে জড়ো হয়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আজকের দিনে কলকাতার একটি কনসার্টে বিখ্যাত সঙ্গিত শিল্পী মোহাম্মদ রফি বাংলাদেশেকে উদ্দেশ্য করে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।

চারিদিকে এতকিছুর মাঝে, যে মুক্তির সুধা বিরাজ করছিলো, তার মাধ্যমে বাঙালি আবার তার চিরচেনা সেই শক্তি ফিরে পাচ্ছিলেন। তবে এই সোনালী দিনের আশ্বাস পেতেও বাঙালির যেই ত্যাগ স্বীকার করা লেগেছিল, তা হয়তো বিশ্বের দরবারে বিরল।

 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক ও গবেষণা থেকে সংগৃহীত ঘটনাবলী নিয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের দর্শক ও পাঠকদের জন্য প্রতিবেদন সিরিজ ‘বিজয়ের দিনলিপি’ তৈরি করা হয়েছে।  দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের ইউটিউব চ্যানেলেও প্রতিবেদনটি ভিজুয়ালি দেখা যাবে।  

Link copied!