ঢাবিতে চলছে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মুকাভিনয় উৎসব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

অক্টোবর ২২, ২০২২, ০৫:৪৫ পিএম

ঢাবিতে চলছে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মুকাভিনয় উৎসব

‘মূকাভিনয় আমাদের সর্বজনীন ভাষা’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম একশন (ডুমা) চতুর্থবারের মতো এর আয়োজন করেছে। আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত চলমান এই উৎসবে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের মূকাভিনয় দলের সদস্যরা মূকাভিনয় প্রদর্শন করছেন।

ডুমার সভাপতি শাহ পরান শুভ্রের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েমের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ইসরাফিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ মাইম ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের মডারেটর ফাদার তপন ক্যামিলাস ডি রোজারিও।

অনুষ্ঠানে ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মুকাভিনয় খুব প্রাচীণ একটি শিল্প। যেটি ইতিহাসের আলোকে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে কীভাবে সমাজে পরিবর্তন ঘটায় তার বেশ কিছু উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। অষ্টাদশ শতকে যখন ফরাসি বিপ্লব  সংগঠিত হয়েছে। তখন খুব কঠিনভাবে কতগুলো সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছিলো। যেমনি লেখনিতে, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে। তখন প্যারিসের রাজপথে ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মূকাভিনয় ছিলো প্রতিবাদের শক্তিশালী একটি মাধ্যমে। যেটি সমাজে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছিলো। তখন দার্শনিকদের বাণী, লেখনী যতটা ভূমিকা রেখেছিলো তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিলো মূকাভিনয় শিল্পীদের প্রদর্শনী ও তাদের অভিনয়। সমাজকে পরিবর্তন করতে যুগে যুগে শিল্পের এই ঘরানাটি অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে। মূকাভিনয় এমন  একটি শক্তিশালী মাধ্যম যেখানে কোনো বিষয় যখন উপস্থাপন করা হয় তখন বইয়ের কথার চাইতে বেশি দাগ কাটে, মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখে। এভাবেই একটি সমাজে পরিবর্তন ঘটে।

তপন ডি রোজারিও বলেন, ‘কৃষ্টি সংস্কৃতি গোটা বিশ্বে মানব সমাজকে চিরায়ত আনন্দ ও অভিব্যক্তির বন্ধনে একত্রিত করেছে। মূকাভিনয়ের ক্লাসিক্যাল এই মাধ্যমটি আজকে তরুণ প্রজন্মর হাত ধরে যেভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তা সত্যই গর্বের। আজ থেকে ১২ বছর আগে ডুমার জন্ম হয়। হাঁটি হাঁটি পা করে দেশ বিদেশে নানা অনুষ্ঠানে নানা পুরস্কার অর্জন করে চতুর্থবারের মত আন্তর্জাতিক মাইম উতসব আয়োজন করছি।

মিহির লাল সাহা বলেন, আমরা কোনো না কোন ভাবে মূকাভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। যেমন কাউকে কিছু করতে নিষেধ করতে আমরা হাতের ইশারা করি। এটিও মাইম। মাইমে আকৃষ্ট হতাম পার্থপ্রতিম মজুমদারের মাধ্যমে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব করছে এটি খুবই প্রশংসনীয়।

অসীম সরকার বলেন, কথা না বলেও যে অনেক কথা বলা যায় সেটা মূকাভিনয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ মূকাভিনয়ের মাধ্যমে এটিও উঠে আসবে।

ইসরাফিল আহমেদ রঞ্জন বলেন, অনেক কথা দাও যায়, কোন কথা না বলে। এটিই মূকাভিনয়। চতুর্থবারের মত ডুমা এই উৎসব করতে পেরেছে। এটি আর কেউ করতে পারেনি। এরমাধ্যমে বাকিরা উৎসাহিত হবে আমার বিশ্বাস।

জাহিদ রিপন বলেন, বাংলাদেশে তিনজন মূকাভিনয়ের তিনজন মহারথী ছিলেন পার্থপ্রতিম মজুমদার, কাজী মশহুরুল হুদা আর জিল্লুর রহমান জন। তারা প্রবাসী হওয়ার পর বাংলাদেশে মূকাভিনয়ে একটি শূন্যতা তৈরি হয়। এরপর আমরা তৈরি করি বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশন। তারপর মাইমের একটি উজ্জ্বল নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম একশনের।

উৎসবের উদ্বোধনী দিনে বন্য প্রাণী নিধন নিয়ে ‘সাইলেন্ট থিয়েটার’ মঞ্চস্থ করে ‘প্রলয় নাচন’, ‘থিয়েটার সার্কেল মুন্সিগঞ্জ’ মঞ্চস্থ করে ‘দ্যা অনেস্ট’, ভারতীয় মাইম ‘লিটল ড্রামা’ মঞ্চস্থ করে ‘জুম চাষ’, ‘মাইম আর্ট’ চারটি নকশা মূকাভিনয় প্রদর্শন করে, ‘শ্রুতি’ মঞ্চস্থ করে ‘বৃক্ষ লিপি’ এবং ঢাকার ‘গোল্লাছুট নাট্যদল’ মঞ্চস্থ করে ‘থার্ড পারসন’ ও ‘কাতুকুতু’।

উৎসবের আয়োজকেরা জানান, এবারের উৎসবে তুরস্ক, ইরান ও ভারতের শিল্পীরা ছাড়াও অংশ নেবে বাংলাদেশে মূকাভিনয় সংগঠন থিয়েটার ‘সার্কেল মুন্সিগঞ্জ’, ‘সাইলেন্ট থিয়েটার’, ‘শ্রুতি মাইম অ্যান্ড থিয়েটার’, ‘গোল্লাছুট নাট্যদল’, ‘মিরর মাইম থিয়েটার’, ‘ঢাকা মাইম থিয়েটার’, ‘মাইম ফেস’, ‘থিয়েটার মুভমেন্ট’ ও ‘নাট্যতরী’-সহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা।

প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে উৎসবের মূল আয়োজন। এছাড়া শহীদ মিনার, কার্জন হল, কলাভবন, শাহবাগসহ পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই থাকবে পথ শো। উৎসব উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতেও প্রদর্শনী হয়েছে। তিন দিনের আয়োজনে থাকছে মূকাভিনয়বিষয়ক কর্মশালা, সেমিনার, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মূকাভিনয় প্রতিযোগিতা এবং পোস্টার প্রদর্শনী।

আন্তর্জাতিক এই উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে (টিএসসিতে) থাকবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দলের মূকাভিনয় প্রদর্শনী। রবিবার রাত ১০টায় অংশগ্রহণকারী দল ও প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। প্রদর্শনীর টিকেট মূল্য ৩০ ও ৫০ টাকা।

Link copied!