ধানের শীষ না থাকায় হতাশ কুমিল্লাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৫, ২০২২, ০৩:০৩ পিএম

ধানের শীষ না থাকায় হতাশ কুমিল্লাবাসী

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা শহরের বহুল আকাঙ্ক্ষিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও নেই সেই নির্বাচনী আমেজ-উত্তাপ। চারদিকে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির সমর্থকরা হতাশা প্রকাশ করছে।

“দেশে তো এখন বিএনপির অস্তিত্ব নেই। এর লেইগা সরকারি দল যা কইবো তাই সই। বিরোধীদল থাকলে তখন বুঝা যায়, কে উন্নয়ন করবো, আর কে করবো না। তখন পছন্দ কইরা নিজেগো লাইগা নেতা বাছাই করা যায়”- কথাগুলো বলছিলেন ভোট দিতে আসা রমিজ আলী।

কান্দিরপাড়ের বাসিন্দা রহমত আলী। ষাটের ঘরে ছুঁইছুঁই তার বয়স। অনেক বার ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন তিনি। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন, এবারও ভোট দেবেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে। তবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি না থাকায় কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

বলেন, আওয়ামীলীগ বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে নানাবিদ দ্বন্দ্ব থাকে। কোন দল আসলে আমাদের উন্নয়ন করবে সেটা বোঝা যায়। কিন্তু এখন সেটার উপায় নাই।

তরুণ ভোটার মারুফ হোসেন। এবারই প্রথম ভোট দেবেন। তরুণ হিসেবে কেমন নগরপিতা চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরপিতা এমন হতে হবে যে আগামী ৫ বছর নগরীর উন্নয়ন করবে। দেশ ও দশের কথা ভাববে ।

আনসার সিকদার বজরাপুরের বাসিন্দা তিনি। গত বার ভোট দিতে গিয়ে শোনেন তার ভোট অন্যকেউ দিয়ে দিছে। এইবার ভোট দিতে পারবেন ভেবে আশা ব্যক্ত করছেন। বলেন, “দেশে তো রাজনৈতিক দল একটাই। কারোর কিচ্ছু হইবো না। তাগো তাগো মধ্যেই দ্বন্দ্ব। তারা নিজেরাই নিজেগো অভিযোগ করে।”

নির্বাচনী প্রচারনায় দেখা যায় এক এক জন এক এক জনের পিছে লাইগা আছে। নিজের জায়গা আর নগরপিতা হইতে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু দিনশেষে আমাগোরে কেউ দেখেনা। এরা নিজেদের লইয়া ব্যস্ত।

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে। তখন থেকেই কুমিল্লাবাসীদের মনে একটাই আক্ষেপ ধানের শীষের পক্ষে কেউ নাই কেন।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৫টি। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীসহ মোট পাঁচজন মেয়র প্রার্থী। ১০৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৬ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী।

এদিকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ২৬০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য ২ হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ সদস্য, র‍্যাবের ২৭টি টিমে ২৫০ জন, ১০৫ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৬০ আনসার সদস্য, এপিবিএনের ৯টি গ্রুপে ৫০ জন সদস্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

শেষ মুহূর্তে এসে ভোটের মাঠে তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। প্রধান তিন প্রার্থী একে অপরের সমালোচনায় সরব ছিলেন। শেষ মুহূর্তে এসে মেয়র পদে ভোটের মাঠে চলছে নানা সমীকরণ। কে জিতবেন? কে হারবেন? এমন আলোচনা চলছে নগর জুড়ে। উঠে আসছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের বিষয়টিও। রাজনৈতিক নানা মেরুকরণে ভোটের মাঠে তিন প্রার্থীর (রিফাত-সাক্কু-কায়সার) মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে—এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

এদিকে, একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে অনেকটা আকস্মিকভাবে সোমবার বিকালে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন মনিরুল হক সাক্কু। আট পাতার ইশতেহারে তিনি নগরীর উন্নয়নে ১৮ দফা অঙ্গীকার করেছেন।

সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুমিল্লা মহানগর ও জেলা শাখা।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বাংলাদেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা।

Link copied!