নিরাপদ ক্যাম্পাস চেয়ে ১১ দফা দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৬:৩১ এএম

নিরাপদ ক্যাম্পাস চেয়ে ১১ দফা দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রাইভেট কারের চাপায় প্রাণ হারান রুবিনা আক্তার। এরপরই নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে জেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত দুইদিন ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করার পর নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার জন্য ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সমাবেশে অংশ নেন শতাধিক শিক্ষার্থী।

‘দাবি মোদের একটাই নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘অনিয়মের ঠাই নাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘বিবেককে প্রশ্ন করি, এবার যদি আমরা মরি’ প্রভৃতি স্লোগানে স্লোগানে কর্মসূচি পালন করেছে।

নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিনা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১১ দফা দাবি লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন।

সেগুলো হলো-

১. বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শান্তির বিধান নিশ্চিত করা।

২. রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা।

৩. ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র নিবন্ধিত রিক্সা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা।

৫. ভ্রাম্যমাণ দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা এবং ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে নূন্যতম ৩০০ ডাস্টবিন স্থাপনের ব্যবস্থা করা।

৬. প্রথম বর্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

৭. মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা।

৮. সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা।

৯. প্রক্টর অফিসে জমে থাকা সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করা। 

১০. নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষে প্রক্টোরিয়াল অফিসের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

১১. নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।

১১টি দাবি তুলে ধরে আনিকা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পার করেছে, সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হয়েছে শত শত সমস্যাও। এই সমস্যাগুলোর সংমিশ্রণে আজ ক্যাম্পাসে আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে জীবনের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ভুগছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আমাদের এই শিক্ষাঙ্গণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করছি। যদি আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের স্বপক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি নিয়ে দিতে বাধ্য হব।’

শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপকের গাড়ির চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন রুবিনা আক্তার। এই ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল হাতে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। এছাড়া রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এসব কর্মসূচি থেকে বিক্ষোভকারীরা গাড়ি চাপায় ওই নারীর মৃত্যুর বিচারের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ, অবাধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে প্রবেশ পথগুলোতে পাহারা চৌকি বসানোসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

Link copied!