পরিচালন মুনাফার শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১, ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম

পরিচালন মুনাফার শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে মুনাফার সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। করোনা ও যুদ্ধের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবনতির কারণে কমে যাওয়া ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আবার বাড়তে শুরু করেছে।

পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এখান থেকে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং নির্ধারিত হারে করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হয়। নিট মুনাফার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলো শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। তবে সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য এখানো পাওয়া যায়নি।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মন্দ গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। ঋণ আদায় না করেও সংশ্লিষ্ট ঋণের সুদ আয় খাতে দেখাচ্ছে। যে কারণে কাগজে-কলমে কমছে খেলাপি ঋণ, বাড়ছে পরিচালন মুনাফা, যা ব্যাংক খাতের জন্য ভালো নয়।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় অংশ আসে ঋণের সুদ থেকে। আবার কোনো ঋণখেলাপি হলে তার বিপরীতে আয় দেখাতে পারে না ব্যাংক। তবে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদায় না করেও আয় দেখাতে পারছে ব্যাংকগুলো।

বিদায়ী বছর শেষে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দুই হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর আগের বছর ব্যাংকটি দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকার মুনাফা করেছে। মুনাফা বেড়েছে ২১৬ কোটি টাকা। তার আগে ২০২০ সালে মুনাফা করেছিল দুই হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৪৪ কোটি টাকা।
এদিকে বছর শেষে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। এর আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৫০১ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ২১১ কোটি টাকা। এক বছর আগে এ মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪৭ কোটি টাকা।
এ ছাড়া যমুনা ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৮৩০ কোটি টাকা। আগের বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা। গত বছরে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল ৩৭৫ কোটি টাকা।

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৮১০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে যার পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। বছর শেষে মার্কেন্টাইল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৮৪৫ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ৭২২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। যার পরিমাণ গত বছর ছিল এক হাজার ১৬ কোটি টাকা।

অপরদিকে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০০ কোটি টাকা। গত বছর মুনাফা করেছিল ২১০ কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ঋণের সুদ আয় খাতে দেখাচ্ছে। এতে কাগজে-কলমে ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানো হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ও সদিচ্ছা দরকার।’

দেশের বেসরকারিভাবে পরিচালিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রতি তিন মাসে একবার ব্যাংকগুলোকে তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দিতে হয়। এর আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেই তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

Link copied!