পুরুষের গর্ভধারণ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২০, ২০২১, ০৩:৩৬ এএম

পুরুষের গর্ভধারণ!

আমাদের সাধারণ চোখ নারীর গর্ভধারণ দেখতেই অভ্যস্ত। তাই পুরুষের গর্ভধারণের বিষয়টি কেউ আলাপে আনলে প্রথম ধাক্কায়ই চোখ কপালে উঠবে অনেকের। তবে, বিষয়টি আমাদের চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো হলেও প্রকৃতিতে এমন কিছু প্রজাতির প্রাণী আছে যারা সন্তান জন্মদানের কাজটি করে থাকে নিজেই।

কিছু প্রজাতির পুরুষ প্রাণী গর্ভধারণ করে। নারীর মতোই নির্দিষ্ট সময় সন্তানকে ধারণ করে নিজেরে পেটে। দীর্ঘ প্রসব বেদনা সহ্য করে তাদের জন্ম দেয়। তবে পুরুষ প্রজাতির গর্ভে সন্তান ধারণের ঘটনা বিরলই।

প্রাণী জগতে একটিমাত্র পরিবারে এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়। সিংনাথিডি পরিবারের একটি মৎস্য গোষ্ঠীর পুরুষেরা গর্ভধারণ করে। এরা মূলত সি-হর্স এবং এই জাতীয় মৎস্য যেমন পাইপ ফিশ এবং সি-ড্রাগন। এরা সবাই সামুদ্রিক প্রাণী। সারা বিশ্বেই সামুদ্রিক অঞ্চলে কমবেশি এসব প্রাণী দেখা যায়।

সিংনাথিডি পরিবারের এসব মৎস্য প্রজাতির লম্বা শুঁড়, শক্ত আবরণে ঢাকা দেহ রয়েছে। অন্য মাছের মতো তাদের শ্রোণীচক্রের পাখনা নেই। চলাচলের জন্য তারা পৃষ্ঠীয় পাখনার ওপর নির্ভর করে। ফলে এই ধরনের প্রাণীর চলাচল বেশ ধীর, এ কারণে তারা সাধারণত এক জায়গার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে।

এদের শরীরের গঠনও অনন্য। এই গঠনের কারণেই শিশু ধারণ ও লালন পালনের দায়িত্ব নারীর কাছ থেকে পুরুষের কাছে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে স্ত্রী প্রাণীটি পুরুষ প্রাণীটির পেটে ডিম স্থানান্তর করে। এর মধ্যে সি-হর্সের পেটে বিশেষ থলি আছে, যেখানে সেটি ডিমগুলো তা দিতে পারে।

ডিমগুলো নিষিক্ত হয় পুরুষের দেহেই। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ডিমে তা দেয়। এই সময়টাতে ডিমে পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং ছানা ফুটে বের হওয়ার পর জীবাণু থেকে রক্ষা করার সব ব্যবস্থা নেয়।

সি-হর্সের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়া ও প্রসব পর্যন্ত দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। প্রসবের দৃশ্যটা খুবই মজার। একটি সি-হর্স এক সঙ্গে ৫০ থেকে ১ হাজার ছানার জন্ম দেয়। এই প্রসব বেদনাটা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। জন্মের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ছানাগুলো সমুদ্রের প্ল্যাঙ্কটনের সঙ্গে ভেসে বেড়ায়। এই সময় শিকারি প্রাণীর কবলে পড়ার ভয় থাকে বেশি। দেখা যায় হাজারে মাত্র একটা সি-হর্স ছানা বয়ঃপ্রাপ্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

অপরদিকে পাইপ ফিশের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা একটু আলাদা। সি-হর্সের মতোই এদের মুখ এবং ক্ষুদ্র শরীর। তবে সি-হর্সের চাইতে বেশি লম্বা।

সি-হর্সের মতোই স্ত্রী পাইপ ফিশ পুরুষের জনন থলিতে ডিম পাড়ে। এটি থাকে তাদের মাথার কাছে। থলিতে ডিমগুলো নিষিক্ত হয় এবং দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ডিমে তা দেয় পুরুষ পাইপ ফিশ। এরপরই বাচ্চা ফুটে বের হয়। পুরুষ পাইপ ফিশ তাদের জনন থলিতে ৫ থেকে ৪০টি ছানা ধারণ করতে পারে।

পাইপ ফিশের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম এবং মজার বৈশিষ্ট্য হলো- একেক বাচ্চার জন্য একেক ধরনের যত্নআত্তি নেয়। যে স্ত্রী পাইপ ফিশ থেকে ডিম এসেছে তাকে যদি পছন্দ না হয় তাহলে ছানাগুলোর খুব একটা যত্ন নেয় না পুরুষটি। বড়, আকর্ষণীয় স্ত্রীর ডিম ও বাচ্চার জন্য পুরুষটি বেশি পুষ্টি সরবরাহ করে ও যত্নআত্তি নেয়। ছানা যদি সুস্থ সবল হয় তাহলে সেটির প্রতি তেমন একটা আর খেয়াল দেয় না।

তৃতীয় যে প্রাণী প্রজাতিটির মধ্যে এই ধরনের জন্ম প্রক্রিয়া রয়েছে সেটি হলো সি-ড্রাগন। স্ত্রী প্রাণীটি পুরুষের দেহে ডিম নিষিক্ত করে। তবে পুরুষ সি-ড্রাগনের জনন থলি নেই। এর পরিবর্তে পুরুষ প্রাণীটি ডিম ধারণ করার জন্য লেজ গুটিয়ে রাখে। এখানেই স্ত্রী প্রাণীটি শ’দুয়েক ডিম পাড়ে। চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। প্রসব প্রক্রিয়াটি কয়েক দিন ধরে চলতে পারে।

সি-ড্রাগনের যেহেতু জনন থলি নেই, সেহেতু ডিম ও ছানা কিন্তু পুরুষ প্রাণীটির শরীরের ভেতরে থাকে না। ফলে কিছু গবেষক এই প্রক্রিয়াকে গর্ভধারণ বলতে নারাজ। কিন্তু লেজের মধ্যেই ডিম ও বাচ্চাদের অক্সিজেন সরবরাহ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে পুরুষ প্রাণীটি। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার আগে পর্যন্ত যা যা দরকার সবই করে তারা।

Link copied!