প্রভাব পড়বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১, ০৭:০১ পিএম

প্রভাব পড়বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও!

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী দেশের শাসন ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দেশটিতে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। চলছে বিরোধীদের ধরপাকড়। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া চলছিল, সেটি আবারো হোচট খাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সু চি যে প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার ফলে সে প্রক্রিয়ায় একটি নুতন দুয়ার খুলতে পারে। তারা বলছেন, যেহেতু সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে, সেহেতু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপ আরো বেড়ে গেলো। 

সোমবার খুব ভোরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট ও ক্ষমতাসীন লীগ ফর ডেমোক্রেসি দলের নেত্রী অং সান সু চিসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আটক করে দেশের শাসনভার নিজেদের হাতে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। একবছরের জন্য জারি করে জরুরি অবস্থা। এ অবস্থায় দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা আবারো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ল।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে দেশটির রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এ ঘটনায় কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে অং সান সু চির সরকার। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক চাপে সু চি সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে নমনীয় হলেও দেশটির  সেনাবাহিনীর চাপে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি এতদিন। সোমবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করায় রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আরো অনিশ্চয়তার মুখে পড়লো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালিউর রহমান বলেন, মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ  করছে সেনাবাহিনী। তারা কখনও চায় না রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে। সু চিকে ক্ষতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী ফের ক্ষমতা নেওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবারো পিছিয়ে গেলো। তবে মিয়ানমারের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র চীন প্রচেষ্টা চালালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটায় গতি ফিরে আসতে পারে।

oyalior-Rahman

ওয়িালিউর বলেন, মিয়ানমারের নতুন শাসক এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির কথা বললেও এর মেয়াদ আরো বাড়তে পারে। সু চিকে বছরের পর বছর ধরে কারাগারে রাখতে পারে সেনাশাসক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাবেক এই সচিব আরো বলেন, ভারত, চীন ও রাশিয়া— মিয়ানমারের ঘনিষ্ট বন্ধুরাষ্ট্র। এই দেশগুলো মিয়ানমারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। এই তিনটি দেশের মধ্যে আবার চীনের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই একমাত্র চীনের প্রচেষ্টায়ই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ফের চালু হতে পারে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কী করণীয়, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে তা মূলত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ফল। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। উই হ্যাভ টু ওয়েট এন্ড সি। তবে সু চিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির ব্যাপারে নতুন প্রশাসন বেশ চাপের মুখে পড়তে পারে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সংকট স্বত্বেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি দ্য রিপোর্টকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই ক্ষমতায় আছেন অং সান সু চি। তিনি অবশ্যই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভালো উদ্যোগ নিতে পারতেন। ওই সময় সু চি তা না করে সেনাবাহিনীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন।

তবে মিয়ানমারের নতুন জান্তা প্রশাসন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছি।

Web-size-former-ministry-

তবে মিয়ানমারে অস্থিরতা স্বত্বেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময়  সু চি অবশ্যই এ বিষয়ে ভালো উদ্যোগ নিতে পারতেন। ওই সময় সু চি তা না করে সেনাবাহিনীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন।

কিন্তু এখন মিয়ানমারের নতুন প্রশাসন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে। এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

Delower-sir

তবে রোহিঙ্গাদের প্রতাবাসন প্রক্রিয়ায় নতুন একটি গতি সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি নতুন ফ্রন্ট খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বেড়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বেশ চাপের মুখে থাকবে নতুন প্রশাসন। ফলে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Link copied!