প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি আট ব্যাংকের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১৫, ২০২২, ০৪:০৮ পিএম

প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি আট ব্যাংকের

চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি সরকারি ও বেসরকারি ৪টি ব্যাংক। 

সরকারি ব্যাংকগুলো হলো- অগ্রণী, বেসিক, জনতা ও রূপালী। বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো- কমার্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। 

ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এর আগে গত জুন শেষে ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে একই সময়ে পুরো ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি চার ব্যাংক ও বেসরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি খাতের ৪টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।

নিয়ম অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলো যেসব ঋণ বিতরণ করে তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ (খেলাপি) ঋণে পরিণত হলে তাতে ব্যাংক যেন আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে। ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ০.২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়।

এছাড়া সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়।

সরকারি ৪ ব্যাংক : রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। জুন শেষে এ ঘাটতি ছিল ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকে ঘাটতি ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। জুনে যা ছিল ৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। জুনে ছিল ২ হাজার ৯৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী। ৩ হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। জুনে রূপালীর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমে হয়েছে ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। জুনে যা ছিল ৬৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বেসরকারি ৪ ব্যাংক : ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। জুনে ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ১১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

সার্বিক প্রভিশন : বছরের তৃতীয় প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৮ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করেছে ৭৫ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯.৩৬ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।  

Link copied!