ফ্লপমাস্টার থেকে যেভাবে মহানায়ক উত্তম কুমার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২, ০৬:১১ এএম

ফ্লপমাস্টার থেকে যেভাবে মহানায়ক উত্তম কুমার

একবার প্রথিতযশা রম্যলেখক শিবরাম চক্রবর্তী গেলেন মিষ্টির দোকানে। খাদ্য রসিক চক্বোত্তি মশাইকে পেয়ে বেজায় খুশি মিষ্টির দোকানদারও। যাওয়ামাত্র দোকানদার তাঁকে এক প্লেট মিষ্টি দিলেন। শিবরাম একটা করে মিষ্টি খান আর বলেন, উত্তম। এভাবে তিনচারটে মিষ্টি সাবাড় করার পর প্রতিবারই তিনি বলতে থাকেন, উত্তম, উত্তম। এরপর  দোকানদার আরো একটি মিষ্টি হাতে দিয়ে শিবরামকে জিজ্ঞেস করলেন, এবার কি বলবেন, চক্কোত্তি মশাই?

খানিক চুপ থেকে শিবরাম বলেন, উত্তমের পর তো এবার সুচিত্রাই বলা যায়।

উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের কালজয়ী জুটি। ছবি: সংগৃহীত

উত্তম-সুচিত্রা বাংলা সিনেমায় এমনই এক জুটি ছিলেন যে, বাঙালি জাতি যতদিন বেঁচে থাকবে, এ জুটির কথা মনে রাখবেই রাখবে। সেই চিরসবুজ জুটির উত্তম কুমারের জন্মদিন আজ।

উত্তমকে বলা হয় মহানায়ক উত্তম। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে এসেছিলেন উত্তম কুমার। ২৪ জুলাই ১৯৮০ সালে ৫৩ বছর বয়েসে মারা যাওয়ার সময় তিনি খ্যাতির মাত্র মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করছিলেন। তাঁর অকালপ্রয়াণে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল তখনকার শোবিজ অঙ্গণে। যে হাহাকারের ধ্বণি এখনও অনুরণিত হয় বাঙালি মানসে।

বাঙালির হার্টথ্রব উত্তম কুমার। মহানায়কের জীবনটাই যেন পুরো একটা সিনেমার গল্প। আজ তিনি আর নেই, পরে রয়েছে শুধু স্মৃতিটুকুই। তবে যা কিছু তিনি দিয়ে গেছেন, তা আর দ্বিতীয়টি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। আজ মহানায়কের জন্মবার্ষিকীতে বাঙালির মন ভারাক্রান্ত। বাংলা ছবির প্রাণপুরুষ তিনি, উত্তমের ম্যাজিকে আজও মজে আপামর বাঙালি।

বাঙালির হার্টথ্রব উত্তম কুমার। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারে বড় সন্তান হিসেবে একজন কেরানি হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করতে বাধ্য হয়েছিলেন। চাকরি করতেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে। এরপর মাত্র ২২ বছর বয়েসে ‘দৃষ্টিদান’ চলচ্চিত্র দিয়ে রূপালী পর্দায় আবির্ভাব ঘটে। তবে যাত্রাটা মসৃণ ছিল না।

১৯৪৮ সালে থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তার অভিনীত সাতটি চলচ্চিত্রের একটিও জমেনি বক্স অফিসে। কপালে জুটেছিলো ‘ফ্লপ মাষ্টার জেনারেল’ তকমা। একসময় অভিনয়ই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তারপর একদিন গল্পের মতো করে জীবনের মোড় ঘুরে যায়। শুরু হয় উত্তম কুমারের উত্তম হয়ে ওঠার যাত্রা । তারপরই তার নায়কসত্ত্বা বেরিয়ে এসেছিল। দাপুটে নায়কই ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক। এভাবেই তিনি নিজেকে একজন অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে মহানায়খ উত্তম কুমারে উন্নীত করেছিলেন।

মেস জীবনের গল্প নিয়ে বড় পর্দায় নির্মল দে তৈরি করলেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। সে থেকেই নতুন পথ চলা শুরু। তারপর দীর্ঘ ২২ বছর। তবে ফ্লপ মাস্টার জেনারেল থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠার পথে সুচিত্রা, সুপ্রিয়া, সাবিত্রী, মাধবী, শর্মিলা ঠাকুর, অঞ্জনা , তনুজা, অপর্ণা সেন সকলের সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন উত্তম কুমার।

৫৩ বছর বয়েসে মারা যাওয়ার সময় তিনি খ্যাতির মাত্র মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

তবে সুচিত্রার সাথে তার রসায়ন আলাদা। একবার উত্তম কুমার বলেছিলেন, "সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনওই উত্তম কুমার হতে পারতাম না। আজ আমি উত্তম কুমার হয়েছি কেবল ওর জন্য।" ২২ বছরের উত্তম-সুচিত্রা জুটি দর্শককে উপহার দিয়েছে ৩০টি সিনেমা। যা বাঙালির মননে আজও চির তরুণ।

এরপর ‘পথে হলো দেরি’, তেমনই হয়েছে ‘হার না মানা হার’, ‘শাপমোচন’ থেকে ‘হারানো সুর’ কিংবা ‘সাগরিকা’ প্রত্যেক ছবিতেই উত্তম-সুচিত্রা 'দ্য টপ, দ্য টপ, দ্য টপ। তিনবার বলার কারণ নিশ্চিয়ই বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা।

উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায়ও দুটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করেছিলেন ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায়ও।

Link copied!