বাংলা ও বাঙালির কবি জসীমউদদীন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ১, ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম

বাংলা ও বাঙালির কবি জসীমউদদীন

কবি জসীমউদদীন প্রখ্যাত বাঙালি কবি, মাটি ও মানুষের কবি। তার কবিতায়, গানে ও নাটকে কৃষিনির্ভর ও নদীমাতৃক বাংলার গাঁয়ের মানুষের কথা ফুটে উঠেছে। জসীমউদদীনের একেকটি কবিতা যেন বাংলার একেকটি গ্রাম।

১৯০৩ সালের এই দিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান এই কবি গ্রামের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, তাদের সুখ-দুঃখ ব্যাপকভাবে তাঁর কবিতা, নাটক ও গানে ফুটিয়ে তুলেছেন।

জসীম উদ্‌দীনের বাবা আনসার উদ্দিন মোল্লা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁর মায়ের নাম আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়েই জসীম উদ্‌দীনের বিখ্যাত কবিতা 'কবর' বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'রাখালী'। তাঁর আরও ৪৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন তিনি।



১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং পরে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৩১ সালে দীনেশচন্দ্র সেনের সঙ্গে লোকসাহিত্য সংগ্রহ কাজে চাকরি করেন। পরে ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে ঢাবির চাকরি ছেড়ে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দেন।

জসীম উদ্‌দীনের নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা অসংখ্য পল্লীগীতি এখোনো গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। পল্লীগীতির মধ্যে আমার হার কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে অন্যতম।

বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান এই কবি গ্রামের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, তাদের সুখ-দুঃখ ব্যাপকভাবে তার কবিতা, নাটক ও গানে ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রামীণ গান এবং গ্রামের মানুষের সঙ্গে জসীমউদ্‌দীনের সম্পর্ক ছিল আত্মিক।

গানের সূত্রে গ্রাম-বাংলার আনাচকানাচে ঘুরে ঘুরেই জসীমউদ্‌দীন খুঁজে পেয়েছিলেন এরোন ফকির, পাঞ্জু ব্যাপারি, দিনু ফকির, যাদব ঢুলি, পরীক্ষিত, দানু মোল্লা, কবিরত্ন এম এ হক, হাজেরা, বিজয় সরকার, হরিবর, মনোহর, নিশিকান্ত, রাজেন সরকার, ইসমাইল প্রমুখ গানের মানুষদের। আর ঢুকে পড়েছিলেন গ্রামীণ গানের একেবারে মর্মের ভেতরে। জসীমউদ্‌দীনের আত্মজীবনীমূলক বই জীবনকথা এসব গ্রামীণ গানের মানুষদের কলকোলাহলে ভরা। সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠিত বড়সড় শহুরে কবি বা সাহিত্যিকের নামগন্ধও নেই।



তাঁর প্রধান গ্রন্থগুলো হলো রঙিলা নায়ের মাঝি, মাটির কান্না, সুচয়নী, পদ্মা নদীর দেশে, বেদের মেয়ে, পল্লীবধূ, গ্রামের মায়া, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, বাঙালীর হাসির গল্প, ডালিম কুমার, বোবা কাহিনী। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীমউদ্‌দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না ও জীবন সংগ্রামের কাহিনিই তাঁর কবিতার উপজীব্য। ‘পল্লিকবি’ হিসেবে তিনি বাংলাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত।

১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। এ ছাড়া রয়েছে একুশে পদক ১৯৭৬ ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)।

১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ বাংলার এ পল্লীকবি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কবির কবর কবিতা অনুযায়ী ডালিম গাছের তলায় কবিকে সমাহিত করা হয়।

Link copied!