আন্তর্জাতিক পুরষ্কার অর্জন করলেন বাংলাদেশি শিল্পী

ডেস্ক প্রতিবেদন

জুন ১৩, ২০২১, ০৩:০৫ এএম

আন্তর্জাতিক পুরষ্কার অর্জন করলেন বাংলাদেশি শিল্পী

পেনআর্ট আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশি শিল্পী ফাওয়াজ রবের 'লং ওয়াক হোম'। ফ্রান্স, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সহ সারা বিশ্ব থেকে আশিজন শিল্পীর মধ্যে তাঁর চিত্রটিকে সেরা হিসেবে মনোনীত করেন বিচারক ও দর্শকেরা।

আন্তর্জাতিক এই অর্জন প্রসঙ্গে ফাওয়াজ রবি বলেন, 'আমি এই আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়ে খুব আনন্দিত। তবে একজন শিল্পীর দায়িত্ব শুধু সুন্দর ছবি আঁকা নয়, তার দায়িত্ব সময়ের কথা বলা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের অমানবিকরণ আমাদের সময়ের একটি বড় ট্র্যাজেডি। রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিন বা উইঘুরদের কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে এদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরস্কার এর চাইতে বড় কথা, আমার শিল্প যদি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের দিকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আনতে পারে তবে আমার উদ্দেশ্য সার্থক। এর জন্য যদি শিল্পী হিসেবে পাশ্চাত্যে অথবা চীনে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়, তাতে কিছু যায় আসে না।'

ফাওয়াজ রব সান ফ্রান্সিসকো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ফ্লোরেন্স (ইতালি)র বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি একজন স্থপতি এবং দশ বছর ধরে এনএসইউ আর্কিটেকচার বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। একজন স্ব-শিক্ষিত শিল্পী যার প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্যারিসে এবং তার শিল্পের কথা উঠে এসেছিলো 'লে প্যারিসিয়েন' ম্যাগাজিনে।

তিনি বাংলাদেশী প্রিন্টমেকারদের একজন সক্রিয় সদস্য এবং শত শত শিক্ষার্থীকে প্রিন্টমেকিং শিখিয়েছেন। পেনআর্ট একটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী যা সমসাময়িক শিল্পের দৃশ্য প্রদর্শন করে। 'আমাদের জুরিরা সারা বিশ্ব থেকে সমসাময়িক বিষয়ে শক্তিশালী ধারণা এবং উদ্ভাবনী কৌশলের শিল্পকর্মগুলোকে নির্বাচন করার উঁচু মানদণ্ড অনুসরণ করেছে।' এই চিত্র কর্ম প্রতিযোগিতার এক বিচারক এ কথা জানান। তিনি আরো বলেন, 'ফাওয়াজ রবের শিল্পকর্মটি রোহিঙ্গা সহ পৃথিবীর সকল শরণার্থীদের, মানুষ হিসেবে যে অসম্মান ও কষ্টের মুখোমুখি হতে হয় তা স্পর্শ করেছে।'

ফাওয়াজ রব প্রথম বাংলাদেশি শিল্পী যিনি প্রিন্টমেকার হিসেবে কম্বোডিয়ায় এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি অর্জন করলেন। এই সুবাদে সেই দেশের বহু পত্রপত্রিকায় শিল্পী সহ বাংলাদেশের কথা ছাপা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রিন্টমেকারদের জন্য এবং সমগ্র দেশের জন্য একটি বড় সম্মান বয়ে এনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই পদকটি এমন একটা সময়ে আসলো যখন বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দেখা হচ্ছে।

শিল্পী ফাওয়াজের ভাষায় 'লং ওয়াক হোম' ছবিটির পেছনে যে দর্শন ছিলো, তা হলো- 'দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বার্মা ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, পরিবারের সদস্য নিহত হয়েছে, ফসল পুড়ে গেছে। এমতাবস্থায় জাতিসংঘ নিতান্তই নিথর। বার্মিজ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে যখনি কোনও রেজোলিউশন আনা হচ্ছে, চীন সরকার সেটাতে ভেটো দিচ্ছেন। আর এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থীর শিবিরে দিন গুনছেন। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র ঠাই দেয়নি, তাদের অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান উদাসীনতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।'

Link copied!