বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৪, ২০২১, ০৮:৫৬ এএম

বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা

চাকরি জীবনের অবসরের দিনক্ষণ নির্ধারিত হওয়ায় বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশনে শুরু হয়েছে বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে বিরোচিত সংবর্ধনা। গার্ড অব অনার, ফুলেল সংবর্ধনা, দুই পাশে দাঁড়িয়ে ফুল দিয়ে বরণ বা সামরিক রীতি অনুযায়ী গাড়িতে রশি বেঁধে সেনাবাহিনীর রশি টেনে নিয়ে যাওয়া জেনারেলের  গাড়ি— সবই ছিল। এভাবেই আবেগময় এক ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি এঁকেছিলেন বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশনের সেনারা। 

সফল একটি ক্যারিয়ার সমাপ্ত করলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে অধিষ্টিত থেকেও তারমধ্যে দাম্ভিকতার ছিটেফোঁটাও মেলেনি কখনো। তার সতীর্থরা এভাবেই মূল্যায়ণ করেন তাকে।

দেশের বিভিন্ন কঠিন সময়ে তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন ত্রাতার ভূমিকায়। দায়িত্ববোধ আর কর্ম— এ দুইয়ে ডুবে থাকতেন তিনি। আর এ কারণেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা আজীবন মনে রাখবেন সৎ-সাহসী এই জেনারেলকে। আগামী ২৪ জুন সেনাপ্রধানের পদে সফল এক কর্ম অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি টানবেন তিনি।

Gen Aziz-2

গত দুদিনে সাভারের নবম পদাতিক ডিভিশন এবং ঘাটাইলের ১৯ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে আবেগাপ্লুত বিদায় সংবর্ধনা দেয়। এই দুই ডিভিশনে নিজের বিদায়ী বক্তৃতায় সেনাপ্রধান উদ্দীপনাময় এক বক্তৃতা দেন।

১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া জেনারেল আজিজ আহমেদের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকী গ্রামে। তার মা রেনুজা বেগম। বাবা আব্দুল ওয়াদুদ বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। আজিজ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি নটরডেম কলেজ, ঢাকা থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন।

কর্মজীবন

এইচএসসি পাশ করে আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীতে নির্বাচিত হয়ে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি চট্টগ্রামে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে তিনি মিলিটারি একাডেমি চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ফিল্ড গোলন্দাজ রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ গোলন্দাজ রেজিমেন্টের বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আজিজ আহমেদ কর্নেল পদবীতে ২০০৯ সালে বিজিবিতে ঢাকা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায়, মেজর জেনারেল পদে এবং ৩৩তম গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে তিনি বিজিবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। এরপর তিনি আর্টডক (আর্মি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড) এর অধিনায়ক হন।

Gen Aziz-3

সেনাপ্রধান হবার আগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহ

সেনাপ্রধান হওয়ার আগে সেনাবাহিনী সদর-দপ্তরে কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আজিজ আহমেদ। তার আগে তিনি ময়মনসিংহে আর্মি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জেনারেল অধিনায়ক) ছিলেন। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক ছিলেন ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত। তিনি কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন (বিজিবির মহাপরিচালক হওয়ার আগে)। তিনি সীমান্ত ব্যাংক-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর একটি যৌথ উদ্যোগ।

আজিজ আহমেদকে সেনাপ্রধান নিয়োগের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সাক্ষী হয়। তার আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশী সৈন্য মোতায়েনসহ সামরিক সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য সৌদি আরবের সাথে একটি বন্ধনহীন চুক্তি স্বাক্ষরের সুযোগ তৈরি করেন।

আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে ২০১৮ সালের ১৮ জুন নিয়োগপত্র লাভ করেন, যা ২৫ জুন ২০১৮ থেকে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য কার্যকর হয়। তার আগে জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক সেনাপ্রধান ছিলেন। জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ২৪শে জুন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।

Link copied!