বিদেশ-বিভূঁয়ের জনারণ্যেও খুঁজে বেড়াই প্রিয়জনের মুখ

রনি মোহাম্মদ। লিসবন (পর্তুগাল) থেকে

মে ৩, ২০২২, ০৪:৪৯ এএম

বিদেশ-বিভূঁয়ের জনারণ্যেও খুঁজে বেড়াই প্রিয়জনের মুখ

কঠোর সাধনায় ৩০ দিন রোজা পালন শেষে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর আসে। সেই আমেজ তেমনটা নেই প্রবাসে। কারণ প্রবাসে আমাদের ঈদ উদযাপন দেশের সাথে তুলনা করে হতাশা বাড়িয়ে লাভ কি..? কারণ, গরীবের ঈদ, প্রবাসীর ঈদ আর হাজতীর ঈদ, এভাবে কি আর ঈদকে খণ্ডিত করা যায়..? আমরা যারা প্রবাসী আমাদের আনন্দ বাস করে আমাদের মনের ভেতরের অদৃশ্য চেতনায়..! তারপরেও অবুঝ মন বারবার ক্রন্দন করে প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে থাকার বিরহে।

প্রবাসের ঈদ উদযাপন— এই বাক্যটির সাথে রয়েছে এক প্রকার খোলা আকাশের নীচে যান্ত্রিক ছুটে চলা ছাদবীহিন এক কারাগারের জীবনের ধারনা। প্রিয়জন-সন্তান,  বাবা- মা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়- স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব ছাড়া সম্পূর্ণ অজানা এক যান্ত্রিক দুনিয়া। আর এই জগতে প্রতিনিয়ত রয়েছে জীবন ও সময়ের সাথে টিকে থাকার যুদ্ধ-সংগ্রাম-লড়াই।

মনের অজান্তে প্রবাস নামের এই কারাগারে হাজারো অপরিচিত মানুষের ভীড়ে তারপরও কিছু পরিচিত মুখ খুঁজে বেড়াই হাজারো মাইল দূরের অজানা এই কঠিন ইট পাথরের যান্ত্রিক শহরে। যদিও এখানে আমাদের মনের মধ্যে ভেসে বেড়ানো মানুষগুলোকে পাওয়া অসম্ভব। তারপরও মন মানে না। এ যেন জীবনের অপরিহার্য বিয়োগান্ত এক কালো অধ্যায়। বিদেশ-বিভূঁয়ের জনারণ্যে তবুও খুঁজে বেড়াই প্রিয়জনের মুখ। কিন্তু কোনো প্রিয়জনের প্রিয়মুখের দেখা মেলে না এখানে। দেশে থাকা আমাদের প্রিয় মুখগুলোর হাঁসির জন্য তবুও প্রতিনিয়ত ভালো থাকার অভিনয় করে যাই।

অনলাইনে দেশের পত্র প্রএিকার খবর দেখি, করোনা মহামারির সময়েও চলতি বছর দেশের অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। বিষয়টি পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য আনন্দের। কিন্তু এর পেছনের বিয়োগান্তু গল্পটা জানে না। শুধু একজন প্রবাসীই জানে এই সাফল্যের মাঝে কত বেদনার গল্প লুকিয়ে। তারপরও আমরা প্রবাসীরা নিজেদের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিয়ে নিজের বলতে অবশিষ্ট কিছু রাখি না। কারণ, প্রবাসে আমরা দুঃখ বেদনা আড়াল করে ভালো থাকার অভিনয় করা শিখে গিয়েছি পরিবারের জন্য। নিজেদের স্বজনদের মুখে হাঁসি ধরে রাখার জন্য আমার জীবন তুচ্ছ করে চলি। তারপরেও অনেক প্রবাসীকে নানা সময়ে কতই না অপবাদ দেওয়া হয়। সেসব আমরা গায়ে মাখি না। দিনান্ত পরিশ্রম করি পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য।

আমরা প্রবাসীরা কখনো কিছু পাওয়ার আশায় এমন ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করছি না। কেবলমাত্র পরিবার ও স্বদেশের ভালোবাসার জন্য আমরা অবিরাম ভালো থাকার চেষ্টা করছি, (আসলে অভিনয় করছি)। কারণ, প্রিয়জনদের দূরে রেখে ‘ভাল আছি’ বলা যায় না। তারপরও সবাইকে ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা। পরিবার-স্বজন যেন ভাল থাকে, দেশ যেন ভাল থাকে, পৃথিবীর মানুষ যেন ভাল থাকে; সেই কামনা ও প্রার্থনা।

লেখক: রনি মোহাম্মদ। লিসবন (পর্তুগাল) প্রবাসী

Link copied!