ভ্রমণের খরচ কমাতে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকে পর্যটকরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০৬:০৪ এএম

ভ্রমণের খরচ কমাতে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকে পর্যটকরা

দেশে ভ্রমণের চেয়ে কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করা যাচ্ছে। যার ফলে অনেকেই এখন বিদেশ ছুটছেন অবকাস যাপন থেকে শুরু করে শপিং ও অন্যান্য ছুটির সময়। মূলত ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার পাশাপাশি বিশেষ দিনগুলোতে সেবার মান ভাল না থাকায় দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশ হচ্ছে না। এমনকি খরচ কমাতে ভ্রমণের সময় আত্মীয় স্বজনের বাসা ও ধর্মীয় উপাসনালে থাকছে দেশীয় পর্যটকরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট ২০২০’ শিরোনামে এই জরিপ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।

দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণে ব্যয় বেশি

প্রতিবেদনে দেখা যায় যে রাত্রিযাপনসহ একই দিনে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে গড় ব্যয় ৯ হাজার ২৭ টাকা। যার ফলে তিন দিনে ব্যয় হচ্ছে ২৭ হাজার টাকার একটু বেশি। এদিকে দেশের বাহিরে ভ্রমণে গড় ব্যয় হচ্ছে ২৫ হাজার ৬৫২ টাকা। অর্থাৎ তিন থেকে চার দিন ভ্রমণে এই খরচ হচ্ছে। যদিও দেশের প্রায় ৬০ শতাংশই ভারত ভ্রমণ করছে। তবে ভ্রমণের এই পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রবিবার নবম এশিয়া পর্যটন মেলায় বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এখনও ধুঁকছে দেশীয় পর্যটন শিল্প। নির্দিষ্ট কোনো দিবস কিংবা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর বাড়তি ভিড়কে কেন্দ্র করে এখানে হরহামেশাই পর্যটকদের ঠকানো হয়। যার ফলে পর্যটক দ্বিতীয়বার এমুখী হয়না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে একই সঙ্গে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আর ম্যানগ্রোভ বনের মতো বিরল সৃষ্টি। ফলে পর্যটন খাত থেকে দেশের আয় উপার্জনের একটা বড় অংশই আসার কথা ছিল।

পর্যটন থেকে আয় হচ্ছে কম

মোট বহির্গামী পর্যটন ব্যয় ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সর্বাধিক ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা খাতে। পরিবহনে ব্যয় ২৫ ভাগ এবং কেনাকাটায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৩ ভাগ অর্থ। 

এদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশিরা পর্যটনে এসে ব্যয় করেছেন ২৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর ৮২ ভাগ ব্যয় হয়েছে অনাবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা। অবশিষ্ট সাড়ে ১৭ ভাগ বিদেশি পর্যটকগণ ব্যয় করেছেন। পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ স্থুল মূল্য সংযোজন হয়েছে ৭৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা যা দেশের মোট মূল্য সংযোজনের প্রায় ১২ শতাংশ। সবমিলিয়ে দেশের জিডিপিতে ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ অবদান পর্যটন খাতের।

যোগাযোগে খরচ বেশি, পর্যটক থাকছে আত্মীয়র বাসায়

দেশের গুটি কয়েক পর্যটন কেন্দ্রবাদে অন্যান্য স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। যার ফলে মূল সড়ক থেকে আশেপাশে যেতে ব্যয় বাড়ছে পর্যটকের। দেশে ভ্রমনের মোট ব্যয়ের ৩৬ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে পরিবহন খাতে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২২ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। কেনাকাটায় ব্যয় হচ্ছে ১৭.৮২ শতাংশ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় ১৫.৭৬ শতাংশ ও সর্বশেষ ২.৩৭ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে বাড়তি সেবা পাওয়া জন্য। আর পর্যটন কেন্দ্র থাকার জন্য ব্যয় হচ্ছে ২৮.০৩ শতাংশ। তবে গড়ে এই ব্যয়ের হিসেব করলেও অনেক পর্যটক আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

দেশের পর্যটকদের মধ্যে ৭৬.৩৬ শতাংশ আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুদের বাসায় থাকছে। বাকি পর্যটকদের মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ কোন স্টার হোটেলে থাকে। বাকিরা নন স্টার হোটেল, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার স্থলে এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়ে থাকছে।

পর্যটন শিল্প বিকাশে মহাপরিকল্পনা

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক, পরিকল্পনা ও গবেষণা, উপ-সচিব মোহাম্মাদ সাইফুল হাসান বলেন, পর্যটন খাতের সাথে অনেক দপ্তর জড়িত বিধায় সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। যার ফলে আমরা একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছি আমাদের লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে বিদেশি পর্যটক ১ কোটি, আয় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করা।

দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদী এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে বিদেশি পরামর্শক সংস্থা আইপিই গ্লোবাল। সংস্থাটির সাথে ২০১৯ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড। চুক্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে মহাপরিকল্পনাটি প্রনয়ন কাজ শুরু হয় এবং ৩০ জুন ২০২০ সালে তা শেষ হবার কথা ছিলো।  কিন্তু কোভিডের কারণে  যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্যাট ও আইটিসহ চুক্তি মূল্য প্রায় ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

ট্যুরিজম বোর্ডের সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প , মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী এই মহাপরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এর শক্তি কতটুকু, দুর্বলতা কোথায়, সম্ভাবনা কেমন, কোন ধরনের সংকট রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে বাংলাদেশের পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস এবং লিংকেজ। তৃতীয় পর্যায়ে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। প্রোডাক্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত এবং বিপণন ও প্রমোশনাল কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

Link copied!