মাছি ভেঙে দিচ্ছে বিয়ে!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ৯, ২০২২, ০৬:৪৭ পিএম

মাছি ভেঙে দিচ্ছে বিয়ে!

একদিকে বিবাহিত পুরুষরা তাদের স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে চলে যাওয়া দেখছে, অপরদিকে অবিবাহিত পুরুষরা পাত্রী খুঁজে পাচ্ছে না। বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে এসে উঠছেন নববধূরা। কিন্তু কয়েকদিন পরেই নতুন সংসার ভাঙছেন তারা। স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন নতুন বৌয়েরা।

কারণ খুবই অদ্ভুত। মাছির উপদ্রব! মাছির উপদ্রবের জন্য বদনাম হওয়া এই গ্রামগুলোতে সহজে কেউ বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসছে না। আবার যদি বা আসে, ভেস্তে যাচ্ছে তা-ও কোনো না কোনোভাবে।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি গ্রামে একের পর এক ঘটছে এই ঘটনা। এই খবর আশেপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় আর কোনো মেয়ে এসব গ্রামে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না। 

উত্তরপ্রদেশের হরদোই জেলার অহিরোরি ব্লকের কয়েকটি গ্রামে এমন অদ্ভুত সমস্যার মূল কারণ হলো মাছির উপদ্রব। মাছির কারণে সম্প্রতি এই জেলার বাধিয়ানপুরা গ্রামের ৬ জন বধূ শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছেন।

মাছির জ্বালায় তারা এতটাই অতিষ্ঠ যে, নতুন বিয়ে হওয়া স্বামী অনুরোধ করলেও তারা আর ফিরতে নারাজ। এমনকি সংসার ভাঙতেও আপত্তি নেই তাদের। স্বামীদের শর্ত দিয়েছেন- হয় গ্রাম ছাড়তে হবে, নয়তো তাদের ভুলে যেতে হবে।

দ্য ওয়ালের খবরে বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের বাধিয়ানপুরা, কুইয়ান, পট্টি, দেই, সালেমপুর, ফতেপুর, ঢাল পুরওয়া, নয়া গাঁও, দেওরিয়া এবং একঘরা গ্রামগুলো মাছির কারণে অতিষ্ঠ। এই গ্রামগুলোর মুখোমুখি হওয়া নজিরবিহীন সমস্যার খবর উত্তরপ্রদেশের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি এমন বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখে হতে হয়েছে বাধিয়ানপুরা গ্রামের বাসিন্দা ধর্মেন্দ্রকে। তিনি জানান, বিয়ের জন্য তার বোনকে দেখতে বাসায় বরপক্ষের লোকজন এসেছিল। তাদের মিষ্টি দিতেই শত শত মাছি হামলা করে বসে। এ কারণে বরের পরিবার ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হয়নি।

গ্রামগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একই কারণে অজয় ভার্মা এবং রামখিলাওয়ান নামের আরও দুজন ব্যক্তি তাদের মেয়েদের বিয়ে দিতে পারেননি। 

মাছির সমস্যা অব্যাহত থাকায় বাধিয়ানপুরার বাসিন্দারা এই সমস্যার বিরুদ্ধে গ্রামের বাইরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য গ্রামের নারীরা বিকেলের মধ্যে তাদের বাসার কাজ শেষ করছেন। 

ইন্ডিয়া টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ওই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ফার্ম চালু করার পর গ্রামগুলো মাছির প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়। গত তিন বছরে মাছির সংখ্যা হাজার হাজারে বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি বর্তমানে অসহ্য জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে গ্রামপ্রধান বিকাশ কুমার এ বিষয়ে তার হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাছির আতঙ্ক এমন একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ঘর-সংসার ভেঙে যাচ্ছে লোকজনের।

তিনি জানান, গত বছর এই গ্রামে তিনজন পুরুষ ও চারজন নারীর কোনোরকমে বিয়ে হয়েছে। গ্রামে আসা তিন বধূ ইতিমধ্যে তাদের বাপের বাড়িতে চলে গেছে। অপরদিকে এই গ্রামের যে মেয়েদের অন্যত্র বিয়ে হয়েছে, তাদেরকে আর বাবা-মায়ের বাড়িতে আসতে দেওয়া হয় না।

অহিরোরি সিএইচসি সুপারিনটেনডেন্ট মনোজ কুমার বলেন, গ্রামগুলোতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। গ্রামে মাছি সংক্রান্ত রোগের কোনো প্রবণতা নেই।

তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াল, ইন্ডিয়া টাইমস

Link copied!