মিয়ানমার: মৃত্যু উপত্যকায় আরও ৫ লাশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্চ ১৩, ২০২১, ০৮:১২ পিএম

মিয়ানমার: মৃত্যু উপত্যকায় আরও ৫ লাশ

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে মৃত্যুমিছিল বেড়েই চলেছে। শুক্রবার দেশটিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে ৫জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৪জন।

শরিবার (১৩ মার্চ) রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গণতন্ত্রের দাবিতে ১৯৮৮ সালে নিহত ফোন মাওয়ের স্মরণে ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটকদের মুক্তির দাবিতে শুক্রবার (১২ মার্চ) রাতে ইয়াঙ্গুনের থারকেতা জেলায় একটি থানার বাইরে পুলিশের গুলিতে  নিহত হন দুই বিক্ষোভকারী। এ ঘটনায় আহত হন আরও  ৫জন।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে মান্দালায় বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলাকালে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালালে অন্য দুইজন নিহত হন। এ ঘটনায আহত হন ১৬ জনের বেশি।

দেশের মধ্যাঞ্চলীয় শহর পিয়ায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন আরও একজন। 

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার। ছবি: এনবিসি নিউজ

১৯৮৮ সালের ১৩ মার্চ মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ‌রেঙ্গুন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফোন মাও।পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরই তাকে গুলি করে হত্যা করে।

মাও এবং কয়েক সপ্তাহ পর নিহত হওয়া আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর মিয়ানমার জুড়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। যেটা ৮-৮-৮৮ বিক্ষোভ নামে পরিচিত। ওই বিক্ষোভে প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হয়।

ওই বিক্ষোভের সময়ই গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান অং সান সু চি। তারপর থেকে প্রায় দুই দশক তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ২০০৮ সালে তিনি গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি পান।

গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। কিন্তু ভোটের ফলাফল সামনে আসার পর থেকেই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ আনে সেনাবাহিনী।

এই অভিযোগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচিত নেত্রী সু চি ও এনএলডির অধিকাংশ নেতাকে হয় কারাগারে না হয় বাড়িতে বন্দি করে রেখেছে সেনাবাহিনী।

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিলেও পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে পুলিশের গুলিতে ৭০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান মিয়ানমারে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে এক জোট হয়ে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেছে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে যৌথ সভা করেছে এসব দেশ। স্থানীয় সময় শুক্রবার(১২ মার্চ) হোয়াইট হাউসে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে নিযুক্ত ওই চার দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ভার্চুয়ালি যোগ দেন। পরে  চার রাষ্ট্রের পক্ষে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়।

কুয়াদ নামে পরিচিত ওই দেশগুলোর গ্রুপের প্রথম মিটিং শেষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার ও তার জনগণের দীর্ঘকালীন সমর্থক হিসেবে আমরা দেশটিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জরুরি প্রয়োজনীয়তা ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালীকরণে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। 

 

Link copied!