মৃত্যুর আগে মেরিলিন ফোন করেছিলেন কেনেডিকে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১, ২০২২, ০৪:৫৫ পিএম

মৃত্যুর আগে মেরিলিন ফোন করেছিলেন কেনেডিকে

মৃত্যুর ৫৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও ভক্তদের হৃদয়ে তিনি রয়ে গেছেন চিরসবুজ বিউটি আইকন হিসেবে। তিনি আর কেউ নন, লাস্যময়ী তারকা মেরিলিন মনরো। ৫০ এর দশকে ‘হলিউড সুপারস্টার’ হিসেবে খ্যাত স্বর্ণকেশী অভিনেত্রী ছিলেন তিনি।

১৯৬১ সালের ১৯ মে ম্যাডিসন স্কয়ারে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্মদিনে মেরিলিন মনরো ‘হ্যাপি বার্থডে মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ গেয়ে শোনান। কেনেডির সঙ্গে ১৯৫১ সাল থেকেই সখ্য মনরোর। কেনেডির সঙ্গে তাঁর প্রেমের খবর ঘুরে বেড়াত বাতাসে। এমনকি মৃত্যুর আগেও ফোন করেছিলেন কেনেডিকে। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

বউ ঘরে থাকলে, কেনেডির নাকি মন ভাল থাকত না! থাকবেই বা কী করে! যেখানেই তিনি, সেখানেই তাঁকে ঘিরে আতপ্ত কামনার ভিড়। রোজ হরেক সম্পর্ক। সেই সব সম্পর্কে কেবলই শরীর আর শরীর! গোপন বৈঠকের মাঝেই সঙ্গিনীদের নিয়ে কত বার যে পাশের কেবিনে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেন! বলতেন, মেয়েদের সঙ্গ-সুধা ছাড়া বেশি ক্ষণ কাজ করলে তাঁর মাথা ধরে যায়!

নিত্য নতুন নারীসঙ্গ, কলেজ-ছুট পরিদের সঙ্গে সুইমিং পুলে দাপাদাপি, উত্তাল যৌনতাড়না— প্রেসিডেন্ট কেনেডির এ সব কেচ্ছা-কীর্তি এক সময় ছিল মার্কিনদের জিভের ডগায়। কাগজে কাগজে তাঁর কবুতর-কথা। এ হেন প্রেসিডেন্টের খপ্পরে পড়লেন হলিউডি সেক্স বম্ব মেরিলিন মনরো! তাঁর তখন দুঃসহ নিঃসঙ্গতা!

তৃতীয় বর, লেখক ও নাট্যকার আর্থার মিলারের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে বুকে যাচ্ছে। নাম জড়িয়ে পড়ছে কখনও সহ-অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে। কখনও হাওয়ায় উড়ছে গোপন প্রেমের গুজব। তবে সবচেয়ে চর্চিত, কেনেডির সঙ্গে সম্পর্ক!
দুজনের আলাপ হল নাকি ঝিলমিল রাত-পার্টিতে। সে সময় কেনেডি পার্টিতে মানেই তাঁকে ঘিরে রতি-রাত! হাসতে হাসতে নিজের প্রাক্তনীকে তিনিই জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘নতুন মেয়ে দিতে পারো?’ এক বার প্রেসিডেন্টকে ঘিরে এ সব কথা হচ্ছে, অদূরে এক দঙ্গল পুরুষ-পরিবৃত মনরো। প্লাটিনাম হোয়াইটের আভা তাঁর চুলে, প্রায় নিসুতো। লাস্যময়ীকে দেখা তক উসখুসানি। তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে কামনার আঁচ পাচ্ছিলেন মনরো। হিসহিসিয়ে এসে বসলেন ঠিক কেনেডির পাশটিতে। শুকনো ঘাসে যেন আগুন ছড়াল!

মনরোর টুকরো কথায় আর সম্মতির নয়নঠারে কেনেডির বুঝি তর সইছিল না আর! ক্রমেই তাঁর আদরের আঙুল ঘুরছিল মেয়ের পিঠ থেকে কোমর ছুঁয়ে ঢের গহন বাঁকে। প্রেসিডেন্ট বেশ মালুম করতে পারছিলেন, মনরো গাউনের নীচে কোনও অন্তর্বাস পরেননি!

সেই শুরু— প্রেমে পড়লেন দুজন।

মোহময় এই প্রেমের সিলসিলা নিয়ে কম চর্চা হয়নি মার্কিন মুলুকে। কোনও কোনও এজেন্সি লেখে, মাঝে মাঝে জন কেনেডি মেরিলিনের সঙ্গে ডেটিং করতেন সমুদ্র কিনারে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এমন এক গোপন অভিসারে ১৯৬২ সালের মার্চে এক বার কেনেডি ও মনরো পাম স্প্রিং-এর একটি জায়গায় দেখা করেন। মনরোকে কেউ যাতে চিনতে না পারে, সে জন্য পরচুলা পরেছিলেন সুন্দরী। আবার এমন তথ্যও মেলে, যেখানে মনরো নাকি নিজেই এক সময় মার্কিন ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডিকে বলেন, ‘তোমার স্বামীকে ভালবাসি।’ জানাজানি হয়, প্রেসিডেন্ট নাকি চলে আসতে চান অভিনেত্রীর কাছে। ঘর বাঁধতে চান দুজনে। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ফার্স্ট লেডি মনরোকে বলেছিলেন, ‘তুমি বিয়ে করো জ্যাককে। এস হোয়াইট হাউস-এ। সব সমস্যা তোমাকেই কিন্তু সামলাতে হবে।’

বেচারি মনরোর সাদা বাড়িতে আসা হয়নি!

মৃত্যুর আগে কয়েক মাস ধরে টানাপড়েন। সে বছরই তৃতীয় স্বামী আর্থার মিলারের সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মনরো সে সময় ক্লান্ত। দুটো অস্ত্রোপচার হয়েছে, ওজন কমে গিয়েছে ২৫ কেজি। তবু শুটিং শুরু হল, তাঁর শেষ সিনেমা ‘দ্য মিসফিটস’-এর। প্রায় দিনই ফ্লোরে গরহাজির। কোনও দিন বলেন, সাইনাস ইনফেকশন। কোনও দিন জ্বর, মাথাব্যথা। এরই মধ্যে কেনেডির জন্মদিন, ২৯ মে। হোয়াইট হাউস থেকে আমন্ত্রণের চিঠি এল। অনুষ্ঠান হবে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে। ইউনিটের সবাই ভেবেছিল, অভিনেত্রী যেতেই পারবেন না। কিন্তু মনরো গেলেন। হীরকদ্যুতি ছড়ানো সাদা ক্রিস্টালের পোশাক, মোহময় বিভাজিকা! দিনটা ছিল শনিবার। ঠিক রাত সাড়ে আটটায় পার্টি শুরু হল।

কোহল চলকে পড়ছে পানপাত্রে। প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সকলে। টইটম্বুর রাত। এক সময় উঠে গিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন মনরো। শরীরের প্রতিটি চড়াই-উতরাই, বাঁক-উপবাঁকের ভুবন দৃশ্যমান। মঞ্চে তাঁকে ঘিরে সাইকেডেলিক আলোকবৃত্ত। মনরো একটু থামলেন, কী যেন ভাবলেন। অতঃপর, সেই চিরচেনা হাসি, চোখের তারায় ঝিলিক। মোহময় কণ্ঠে কেনেডির দিকে চেয়ে গেয়ে উঠলেন, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...

ডানার মতো দু’হাত ছড়িয়ে দিলেন দু’পাশে, অনন্ত উড়ানে। যেন এক্ষুনি সুদূর নীলিমায় উড়ে যাবে রাতপাখি। মৃত্যুর মাত্র আড়াই মাস আগে কোনও পাবলিক অনুষ্ঠানে সেটাই ছিল মনরোর শেষ উপস্থিতি!

মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই লস অ্যাঞ্জেলেসে দেহ মিলল এক রাত্তিরে। সে দিন অগস্টের ৫ তারিখ, ১৯৬২। মনরো নাকি শেষ ফোনটি করেছিলেন প্রেসিডেন্টকেই! ব্যক্তিগত টেলিফোনে। যে ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন দুজনে। সারা রাত্তির।

Link copied!