মৃত্যুর ৩১ বছর পর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান নজরুল ইসলাম বাবু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৮, ২০২২, ০২:৫৬ এএম

মৃত্যুর ৩১ বছর পর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান নজরুল ইসলাম বাবু

৩১ পেরিয়ে ৩২ বছর হতে চললো তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তাকে নিয়ে কর্পোরেট আয়োজনে কোনো হইচই নেই, কোনো স্মরণসভা-সেমিনারও নেই। তবে পথে প্রান্তরে ঠিকই বাজে তাঁর গান। তাইতো উপেক্ষা করা গেল না কোনভাবেই। শেষ পর্যন্ত চলতি বছর পেলেন রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাঁর মধ্যে শিল্পকলায় (সংগীত) নজরুল ইসলাম বাবুর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

দেশাত্মবোধক গানের কথা উঠলে যে দুটি গান প্রথম দিকেই মুখে আসে, সেগুলো হচ্ছে ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ এবং ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’। এই বিখ্যাত দুটি গানসহ বহু কালজয়ী গানের গীতিকবি নজরুল ইসলাম বাবু।

একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলোই ডিসেম্বরের জাতীয় থেকে স্থানীয় যেকোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানগুলো ছাড়া পূর্ণতা পায় না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তার মতো কিংবদন্তীতুল্য গীতিকবির কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ৩২ বছর!

১৭ জুলাই তার জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরনগর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম বাবু। তার পিতা বজলুল কাদের ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী মানুষ। সেই প্রভাব পড়ে নজরুল ইসলাম বাবুর মধ্যেও।

তার বয়স যখন ২২ বছর, তখন শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। বসে থাকেননি নজরুল ইসলাম বাবু। অংশ নেন স্বাধীনতার যুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পড়াশোনা, সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে তিনি বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি গান লেখায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭৩ সালেই তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসেবে তাকিাভুক্ত হন।

নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘ডাকে পাখি খোলো আঁখি’, ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’, ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ ও ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’ ইত্যাদি।

১৯৭৮ সালে কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে সিনেমায় গান লেখা শুরু করেন নজরুল ইসলাম বাবু। বহু সিনেমায় গান লিখেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘মহানায়ক’, ‘প্রতিরোধ’, ‘উসিলা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘প্রেমের প্রতিদান’ ইত্যাদি।

গুণী এই গীতিকবির লেখায় কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোর, কুমার শানু, আশা ভোষলে, হৈমন্তী শুক্লার মতো বিখ্যাত সব শিল্পীরা।

১৯৯০ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আসছে সেপ্টেম্বরে তাকে হারানোর ৩২ বছর পূর্তি হবে। মহাকাল তাকে বেশি দূর যেতে দেয়নি ঠিকই, কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবু এই বাংলায় প্রতিদিন ফিরে আসেন তার লিখে যাওয়া সব প্রেম-বিরহ ও দেশের গানে গানে।

Link copied!