যার আদর্শে প্রভাবিত অহিংস আন্দোলন ও রুশ বিপ্লব

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২১, ২০২১, ০১:৪৯ এএম

যার আদর্শে প্রভাবিত অহিংস আন্দোলন ও রুশ বিপ্লব

তাকে রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলা হয়ে থাকে। এমনকি বিশ্ব সাহিত্যেরও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। জ্ঞানার্জনে অসীম আগ্রহী, অদম্য অনুসন্ধিৎসু। অফুরন্ত জীবনীশক্তির অধিকারী ও কর্মোদ্যমী। তিনি রুশ সাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক লিও তলস্তয় বা লেভ টলস্টয়। পুরো নাম কাউন্ট লেভ (লিও) নিকোলায়েভিচ তলস্তয়।

১৮২৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। বর্তমান রাশিয়ার রাজধানীর মস্কো থেকে ১৩০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত ইয়াস্নায়া পলিয়ানার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্ব সাহিত্যের বিস্ময় এই ক্ষণজন্মা মানুষটি বাবা ও মা উভয়ের দিক থেকেই তিনি ছিলেন খাঁটি অভিজাত পরিবারের বংশধর। বাবা কাউন্ট নিকোলাই ইলিচ টলস্টয় ছিলেন বিশাল জমিদারির মালিক। বাবা-মার চার সন্তানের মধ্যে তলস্তয় ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

বলা হয়ে থাকে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতো স্বশিক্ষিত ছিলেন তলস্তয়। তবে তিনি ছিলেন বহু ভাষাবিধ। রুশ ভাষার পাশাপাশি লাতিন, ইংরেজি, আরবি, তুর্কো-তাতার, ইতালীয়, গ্রিক এবং হিব্রু ভাষাটা ভালভাবে আয়ত্ব করেছিলেন ১৪ সন্তানের বাবা তলস্তয়। রবীন্দ্রনাথের মতো সঙ্গীতশাস্ত্র এবং চিত্রাঙ্কণেও ভাল পারদর্শী ছিলেন তিনি।

তলস্তয়ের অভিজ্ঞতার পরিধি ছিলো বিশাল। মসমাজের সবচেয়ে নিচু তলার মানুষ থেকে শুরু করে রাজদরবারের লোকজন-সবার সাথে মিশতেন। তার উপন্যাস বা গল্পের কাহিনীতে যেসব চরিত্র, সামাজিক সত্য বা জীবনযাত্রার ছবি এঁকেছেন, সেগুলো তিনি নিজে দেখেছেন।

বাড়িতেই ফরাসি ও জার্মান গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন তলস্তয়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ফুফুর কাছে বড় হতে থাকেন। ভর্তি হন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের অরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় তার কোনো মনোযোগ ছিলো না।তাই বছর  শেষে পরীক্ষার ফলাফল অকৃতকার্য।  পরে ভর্তি হন আইন অনুষদে। সেখানেও একই অবস্থা। অবশেষে কোনো ডিগ্রি ছাড়াই ১৮৪৭ সালে কাজান বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন ।

তবে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সাহিত্য ও নীতিশাস্ত্রের উপর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ইংরেজ সাহিত্যিক লরেন্স স্টার্ন এবং চার্লস ডিকেন্সের উপন্যোসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ফরাসি দার্শনিক জাঁ জ্যাক রুশোর লেখার প্রতিও তিনি আগ্রহ অনুভব করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর তিনি জন্মস্থান ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় ফিরে এসে বাবার বিশাল জমিদারি দেখাশুনা করতে শুরু করেন। গ্রামের কৃষকদের সাথে কৃষিকাজ করার মনস্থির করেন। তবে এখানেও ব্যর্থ তিনি। পরে সেনাকর্মকর্তা বড় ভাইয়ের পরামর্শে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ককেশাসে তিনি কয়েক বছর সৈনিক হিসেবে কাটান। তার ককেশাসে কাটানো সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী সময়ে তিনি লিখে ফেলেন তার জীবনের অন্যতম সাহিত্যকর্ম 'ককেশাসের বন্দী ও কসাক'।

লিও তলস্তয় নিজেকে পরিবর্তনের কথা বলতেন। শুধু বলতেন না, নিজেকে পুরোপুরি পরিবর্তনও করতে পেরেছিলেন। একই সাথে অসংখ্য মানুষকেও পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি মানুষকে জীবনের উদ্দেশ্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। তিনি মানুষের মধ্যে জীবনবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, নীতিবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।তবে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এই সহজাত গুণটি অনুপস্থিত থাকায় বেশ আক্ষেপও ছিল তলস্তয়ের।একারণেই হয়তো তিনি বলেছেন-“প্রত্যেকেই পৃথিবীকে বদলে ফেলার চিন্তা করে, কিন্তু কেউ নিজেকে পরিবর্তনের কথা ভাবে না।” 

পাশ্চাত্যের অনেক কবি সাহিত্যিক যেখানে ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যেই সাহিত্য চর্চা শুরু করেছিলেন সেখানে তলস্তয় অনেকটা দেরিতে শুরু করেন। আসলে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করবেন কিনা-এমন সিদ্ধান্ত নিতে তলস্তয়ের ৩৫ বছর সময় চলে গেছে। ওই সময় বিখ্যাত লেখক ইভান তুর্গেনেভকে একটা চিঠিতে তলস্তয় লিখেছিলেন, “আমি সাহিত্য চর্চার যোগ্য নই, তাই লিখব না।” তুর্গেনেভ সস্নেহে জবাব দিয়েছিলেন, “কী আর বলব, আমি তো অতীত। আমাকে ভাঙিয়ে তো তোমার চলবে না, কিন্তু তুমি তো ভবিষ্যৎ। তোমাকে না ভাঙিয়ে আমার চলবে কী করে? সুতরাং লেখো। তুমি লেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারো না।” এভাবেই লেখক তুর্গেনেভের পরামর্শে লিখতে শুরু করেন।

রুশ সাহিত্যের অন্যতম এই সাহিত্যিকের অন্যতম সৃষ্টি ‘ওয়্যার  এন্ড পিস’। ১৮৬২ সালে এই উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন। শেষ করেন ১৮৬৯ সালে। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের যুদ্ধের ঐতিহাসিক বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবধর্মী অথচ কল্পনাশ্রয়ী কিছু চরিত্রের সুচিন্তিত ক্রমবিবর্তন যুক্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। ‘টাইম ম্যাগাজিন’-এর মতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস হচ্ছে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’।

এই উপন্যাসটি পাঠ করে ফ্লবেয়ার মস্তব্য করেছিলেন, “কী মহান শিল্পী, কী অসামান্য মনস্তত্ত্বিক!” ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-কে বলা যায় দানব আকৃতির উপন্যাস।এতে প্রধান চরিত্রই আছে ৫৮০টি, যারা চারটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। বংশানুক্রমিক ও জটিল উপন্যাসটির প্রেক্ষাপটে রয়েছে ইতিহাস, নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের ঘটনা।

রুশ সাহিত্যিকদের মধ্যে তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, পুসকিন, গোগল, চেখভ, গোর্কি প্রমুখের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। এদের মধ্যে টলস্টয়ের মহিমা ও সুনাম সর্বাগ্রে। তলস্তয়কে নিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি তাই বলেছিলেন, “তলস্তয় নিজেই একটি পৃথিবী।”দস্তয়ভস্কি মনে করতেন, “জীবিত সকল সাহিত্যিকদের মধ্যে টলস্টয় সর্বশ্রেষ্ঠ।”

তলস্তয় সম্পর্কে ব্রিটিশ কবি ও সমালোচক মেথু আর্নল্ড বলেন, "তলস্তয় শুধু এক শিল্পকর্ম নয়, বরং জীবনের একটা অংশ।" তিনি যথার্থই বলেছিলেন, “তলস্তয়ের লেখাগুলোতে জীবন ও নীতিবোধ ফুটে উঠেছে। তিনি 'শিল্পের জন্য শিল্প'- এ মতবাদ বিশ্বাস করতেন না। তার মতে, সাহিত্য হবে জীবনের জন্য। মানুষের চিরায়ত কামনা ও শান্তির অন্বেষা টলস্টয়ের সাহিত্যকে অমর করে রেখেছে।”

ভারতের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ও তলস্তয়ের সাহিত্যাদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তলস্তয়কে নিয়ে তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন।  ১৯৮০ সালে অন্নদাশঙ্কর রায়ের ১৩টি ছোট-বড়  প্রবন্ধ নিয়ে 'তলস্তয়' নামে একটি সঙ্কলন বের হয়। এ সঙ্কলনের ভূমিকায় অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, “তলস্তয়ের কাছেই তার সাহিত্যিক শিক্ষানবিশির সূচনা হয়।”

তলস্তয়ের সৃষ্টিকর্মের জন্য বিশ্বের বাঘা বাঘা সাহিত্যিক তাকে গুরু মানলেও নোবেল পুরষ্কার জোটেনি এই বিস্ময়কর সাহিত্যিকের। ১৯০২ থেকে ১৯০৬ সালে পর্যন্ত প্রতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আবার এবং ১৯০১, ১৯০২ ও ১৯১০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।  তবে মহান মানুষটি কখনো নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হননি। এই বিষয়টি হয়তো নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে আছে। তবে নোবেল কমিটি তাকে মূল্যায়ন না করলেও তলস্তয়ের উপন্যাসগুলো বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

অনেক সমালোচক এমনকি সাহিত্যিকদের মধ্যে অনেকে তাকে নাস্তিক মনে করে থাকেন। তাদের মতে, লিও তলস্তয় ধর্ম বিশ্বাস করতেন না। তবে লিও তলস্তয়ের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি  প্রকৃত ধার্মিক ছিলেন। তার প্রতিবাদ ছিলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, ধর্ম ব্যবসার বিরুদ্ধে  ধর্মনীতির। তিনি মানুষের মধ্যে জীবনবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, নীতিবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। তলস্তয় তাঁর সময়ের বিশিষ্ট প্রগতিবাদী বৈপ্লবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ।

সব ধর্মের মূলনীতি মানবসেবা ও জনকল্যাণ। তিনি খ্রিস্টান হয়েও  ইসলাম ধর্মের অনেক মল্যবান বাণী ধারণ করতেন মনেপ্রাণে। একারণেই হয়তো জীবন চালানোর জন্য বেঁচে থাকাবস্থায় মানুষ যেভাবে মুদ্রা বা টাকা পয়সা নিয়ে ঘোরে, রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ও সেভাবে পকেটে নিয়ে ঘুরতেন নবীজির বাণী। মৃত্যুর পর তলস্তয়ের ওভারকোটের পকেটে নবীজির ৪৫১টি নির্বাচিত হাদিসের সংকলন পাওয়া গিয়েছিল।

নিজের সিদ্ধান্ত ও মূল্যবোধে বরাবর অবিচল থেকেছেন তলস্তয়। প্রচণ্ড একরোখা মানুষ ছিলেন। কোনো ছক বাধানো ব্যবস্থাকেই তিনি ঠিক পছন্দ করতেন না। একবার তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলে তলস্তয়কে একটি ফর্ম পূরণের কথা বলা হয়। ওই ফর্মে লেখা ছিল -এই মর্মে পিতার অঙ্গীকার করতে হয় যে, সন্তান স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার করবে না। লেখাটি দেখে  বেঁকে বসেন তলস্তয়। তিনি কর্তৃপক্ষকে বোঝালেন- “নিজের বিষয়ে অঙ্গীকার করা যায়, কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে কিভাবে সম্ভব?”স্কুল কর্তৃপক্ষ না মেনে নেয়ায় সন্তানকে আর ওই স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি তিনি।

আমাদের এই পৃথিবীতে আজও তলস্তয়ের একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়-হাউ মাচ ল্যান্ড ডাজ এ ম্যান রিকুয়ার? বা একজন মানুষের ঠিক কতটুকু জমির দরকার? তলস্তয় তার ডায়েরিতে লিখে গেছেন: সবার মধ্যে ঈশ্বর হচ্ছেন অনন্ত অসীম। মানুষ হচ্ছে তার সসীম প্রকাশ। কেবল ঈশ্বর সত্যিকারভাবে বিরাজমান। মানুষ নিজেকে সময়, স্থান ও বস্তুর মধ্যে প্রকাশ করে। অন্যান্য সত্তার সঙ্গে যত বেশি মানুষের প্রকাশ ঘটে মানুষের অস্তিত্ব তত বেশি বিরাজমান থাকে। অন্য প্রাণীর সঙ্গে জীবনের এই ঐক্য ঘটে ভালোবাসার মাধ্যমে।

তলস্তয় তার জীবদ্দশায় যে জাগতিক সুখ, ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়েছিলেন সেজন্য সারাজীবন তার বিবেকের দংশন ছিল।তিনি ভুলতে পারেনি, তিনি যে বিলাসী জীবন কাটিয়েছেন তা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের শ্রওম ও ঘামের বিনিময়ে; সাধারণ মানুষের কারণেই তিনি বিলাস-ব্যসন পূর্ণ জীবনযাপন করতে পেরেছিলেন।

তলস্তয়ের সততা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বিস্ময়কর ছিলো-এতে কোনো সন্দেহ নেই।  তার মনের গড়ন ছিলো ভাবুকের, দার্শনিকের। ১৯১০ সালেরে এই দিনে (২০ নভেম্বর) পরকালে পাড়ি জমানো খ্যাতিমান এই কথাসাহিত্যিক বেঁচেছিলেন প্রায় ৮৩ বছর। সাহিত্যস্রষ্টা তলস্তয় মানব সমাজে আজও বেঁচে আছেন এবং তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকবেন।

তলস্তয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিশ্ব এক চলমান আদর্শকে হারিয়েছে। হারিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের এক কিংবদন্তিকে। তিনি মৃত্যুবরণ করলেও তার আদর্শ সমুন্নত রয়েছে। তিনি যে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করেছে।  মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন এবং ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের রুশ বিপ্লব অনেকাংশে তলস্তয়ের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

তথ্যসূত্র:  

১. Tolstoy in Color," Tolstoy Studies Journal, a publication of the Tolstoy Society of North America, n.d. Retrieved 27 June 2018.

২. Beard, Mary "Facing death with Tolstoy"The New Yorker

৩. Tolstoy: the making of a novelist. E Crankshaw – 1974 – Weidenfeld & Nicolson

৪.  Hedin, Naboth (১৯৫০-১০-০১)। "Winning the Nobel Prize" The Atlantic

Link copied!