রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ কি হবে দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মোড় নির্ধারক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০৭:০০ এএম

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ কি হবে দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মোড় নির্ধারক?

ভোরের আলো ফুটলেই রাজশাহীতে শুরু আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশ। দশমবারের মতো দলটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে ভাষণ দিবেন শেখ হাসিনা। নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে সমাবেশের জন্য নেয়া হয়েছে সব রকম প্রস্তুতি। শুধু রাজশাহীবাসী নয় বরং এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার ভাষণ নিয়ে সবার মধ্যে চলছে আলোচনা। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং রাজনৈতিক বর্তমান অবস্থা নিয়ে কি বলবেন তিনি সেদিকেই মনোযোগ সবার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগরের উন্নয়নে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের আসার জন্য লোকাল রুটে চলাচলকারী ৭টি ট্রেন ভাড়া করেছেন দলের নেতারা। রবিবারের এই সমাবেশের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রোহনপুর স্টেশন থেকে ২টি এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবি স্টেশন, বগুড়ার সান্তাহার স্টেশন, নাটোর স্টেশন, সিরাজগঞ্জ স্টেশন ও রাজশাহীর আড়ানী স্টেশন থেকে অন্য ৫টি ট্রেন চলাচল করবে।

এ নিয়ে পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ১০ হাজার ৩০৬ আসনের ৭টি ট্রেন ভাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে সদর দপ্তর ট্রেনগুলো ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রেনগুলো ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ এবং সাধারণ যাত্রী ওঠা-নামার শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে ৭টির মধ্যে মাত্র ১টি ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করেছেন নেতারা। বাকিগুলোর ভাড়া সমাবেশের আগেই পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। 

শেষবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবারও পদ্মার কোলঘেঁষা রাজশাহীতে আসছেন তিনি। রাজশাহী মহানগর ও জেলা শাখা আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, উন্নয়নের বার্তা নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ধারাবাহিকতার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে ভাষণ দিবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, নির্বাচনের আগের বছর তো নির্বাচনী বছর হিসেবেই ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, আমি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে গেলাম। নির্বাচন এলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে যেন উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা দেখা দেয়। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী জনসভা থেকে জনগণকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। 

কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম আশা করছেন জানিয়ে রাসিক মেয়র আরও বলেন, আওয়ামী লীগের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবার যে পরিকল্পনা সেটি মানুষ শুনতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে চেয়েছিলেন, তা হয়ে গেছে। আমরা সুফল পাচ্ছি। এখন তিনি তরুণদের নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান। সেটাও হবে। মাঠ শুধু নয়, মাঠের বাইরেও প্রচুর মানুষ থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা শুনতেই মানুষের ঢল নামবে।

শনিবার মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসা ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের আর বাকি মাত্র এক বছর। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা আগেই শুরু করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য রাজশাহীবাসীর সমর্থন জানতে চাইবেন। তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে গত ১৪ বছরে যা কিছু করেছেন তার ওপরই ম্যান্ডেট অবশ্যই চাইবেন। স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে রাজশাহীতে বলে দাবি করেন তিনি। 

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র ২১ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই অল্প সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে দেশে। রাজশাহীর জনসভা থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে রূপকল্পের কথাও বলবেন প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশ যেভাবে গড়তে চাইছেন সেসব কথা বলবেন। একইভাবে তিনি স্মার্ট বাংলাদেশও গড়বেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমার বিশ্বাস রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে বিএনপির নেতারাও যোগ দেবেন। কারণ তারা এই দেশের নাগরিক, কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নয়।

নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এর আগে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে তফসিল ঘোষণার আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

গত নভেম্বরে যশোর শাখা আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই সভায় দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেন। ওই জনসভার পর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের সভাপতি পদে আবারও নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

Link copied!