বেশ কয়েক মাস ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চিত্রনায়ক শাকিব খান, অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও শবনম ইয়াসমিন বুবলী। ব্যক্তিজীবন নিয়ে বুবলী-অপু পৃথক সময়ে একেকজন একেক সময় নানা মন্তব্য করছেন। আর এসব প্রকাশ করতে তারা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছেন।
অপু বিশ্বাস ও শাকিব খানের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে কয়েক বছর হলো। সম্প্রতি কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বেবিবাম্প ছবি প্রকাশ করেন বৃবলী। এরপর অপু বিশ্বাস-শাকিব খানের সন্তান আব্রাহাম খানের জয়ের জন্মদিনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিজের ও শাকিব খানের সন্তান শেহজাদ খান বীরের ছবি প্রকাশ করেন তিনি। এসব ঘটনায় শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও বুবলীর ত্রিমুখী ভার্চ্যুয়ালি যুদ্ধ ছিল ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম গরম খবর।
এরই মাঝে সম্প্রতি ঢালিউডের ‘নাম্বার ওয়ান’ অভিনেতা শাকিব খানের সঙ্গে তৈরি হওয়া তার দ্বন্দ্ব ও দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন শবনম বুবলী। তবে ওই সংবাদ সম্মেলন না হওয়ায় ভক্তদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। তাই রবিবার সন্ধ্যায় একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন বুবলী। ওই ভিডিও বার্তায় তিনি শাকিব খানের সঙ্গে নিজের, নায়িকা অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক ও সন্তানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। এদিন সব বিষয়ে এক এক করে কথা বলেন তিনি।
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পাঠক ও দর্শকদের জন্য তা তুলে দেওয়া হল।
অভিনেত্রী বুবলী তার ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি ২০১৬ থেকে কাজ করছি। শাকিব খান, যিনি আমার সন্তানের বাবা, আমার স্বামী, তার সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি বা সুযোগ পাই। উনি আমাকে মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন। ওনার মাধ্যমেই আমার ফিল্মে আসা। ওই সময়ে আমি কেন, পুরো বাংলাদেশের কেউ কি জানতেন ওনার আগের কোনও সম্পর্ক নিয়ে? এটা কিন্তু আমরা কেউই জানতাম না।’
তিনি জানান, শাকিব খান নিজেকে তার কাছে সিঙ্গেল হিসেবেই উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সুবাদেই তাদের মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন অপু বিশ্বাস টেলিভিশন লাইভে এসে বোমা ফাটালেন, অভিযোগের তীর ছুটে আসে বুবলীর দিকেই।
ওই সময় অপুর আচরণে কষ্ট পেয়েছেন জানিয়ে বুবলী বলেন, ‘২০১৭-তে যখন বিষয়গুলো (অপু বিশ্বাসের সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসা) সামনে আসলো, তখন শাকিব খান নিজেও অবাক হয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে যিনি সম্পর্কে ছিলেন, অপু বিশ্বাস, উনি অনেক সিনিয়র আমার থেকে। অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। তাকে অবশ্যই আমি কাজের জায়গা থেকে সম্মান করি। তার সঙ্গে কখনই আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে তিনি লাইভে আসার আগে হঠাত আমাকে ফোন করেছিলেন এবং অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি কেন! ওই ব্যবহারের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ওই বাজে ব্যবহারের কথা তিনি নিজেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন।’
বুবলী বলেন, ‘আমার কষ্টের জায়গা ছিলো, আমি তো কিছুই জানি না। আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিলো, সেটা তো না। কেন আমাকে জড়িয়ে এভাবে বলা হচ্ছিলো! সে কারণেই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।’
এ বিষয়ে শাকিবের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন দাবি করে বুবলী বলেন, ‘আমি শাকিব খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পরে তিনি অনেক ইমোশনালি আমাকে বলেন যে, ‘অনেক দিন ধরেই কথাগুলো তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তুমি তো এটাতে জড়িত নও। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এক বছর ধরে আমার যোগাযোগ নেই। এটা অপুদি নিজেও লাইভ প্রোগ্রামে বলেছিলেন। আপনারা অনেকেই জানেন, শাকিব খানের কথা অনুযায়ী অপু বিশ্বাসকে তিনবার অ্যাবর্শন করতে হয়েছিলো। চতুর্থবার বাধ্য হয়েই তিনি সন্তান নিয়েছিলেন। এইসব ঘটনায় তো আমি নেই। তখন সিনেমাতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেন আমাকে দোষারোপ করা হলো যে, আমার কারণে কারও সংসার ভেঙেছে? আমার কারণে কারও সংসার, সম্পর্ক ভাঙেনি। আমি স্পষ্ট করে দর্শকের উদ্দেশে বলতে চাই।’
বিষয়টি স্পষ্ট করে বুবলী আরও বলেন, ‘তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াটা, সেটাও তো সম্পন্ন তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তারা তো ম্যাচিওর মানুষ। এটা সম্ভব যে, কারো দ্বারা প্ররোচিত! কোনো সম্পর্কে সমস্যা হওয়ার পর একজন যখন আরেকটি সম্পর্কে যুক্ত হন, সেটার জন্য কি ওই নতুন মানুষ দোষী হয়ে যায়? আমাদের সমাজে অনেকেই নতুন সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছেন না? তাদের যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তারা যদি সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে চায়, এটার জন্য কি নতুন মানুষটি দায়ী? শাকিব খান নিজেই আমাকে বলেছেন, তিনি এই সম্পর্কে (অপু বিশ্বাসের সঙ্গে) সুখী নন। তিনি তার জায়গা থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। যেটা আমি তার সম্মানার্থে আগেও বলিনি, আজও বলবো না। এটুকু বলি, আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের সমস্যাগুলো তো অনেক আগে থেকেই।’
নিজের সন্তান শেহজাদ খান বীরের প্রসঙ্গে কথা বলতে যেয়ে একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম ওর বিষয়টা একসঙ্গে সুন্দরভাবে সামনে আনতে। কিন্তু কোনওভাবে হচ্ছিলো না। আমি তো প্রায় তিন বছর অপেক্ষা করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পর থেকে আমি কারও বিষয়ে কোনও অভিযোগ করিনি। এবং আজও করছি না।’
শাকিব-বুবলীর ছেলে শেহজাদ খান বীরের উদ্দেশে কাঁদতে কাঁদতে বুবলী বলেন, ‘বাবা শেহজাদ, মা হয়ত সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো না। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো আমিও তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি বা করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, বড় করা। আমি সবসময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। তুমি মানুষের মতো মানুষ হবা। একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে। আমি হয়ত আমার জায়গা থেকে তোমার জন্য সেরাটা দিতে পারি না। কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।’
ভিডিওর শেষের দিকে বুবলী বলেন, ‘কিছু জিনিস শেয়ার করেছি আমার সন্তানের জন্য। ও তো বড় হচ্ছে এবং আপনারা অনেক সময় ওকেও বিভিন্ন বিষয়ে ইনভলব করে ফেলেন। ওর কোনো দোষ নেই, ও তো ছোট মানুষ। ওর তো তিন বছর প্রায়। আমরা চেয়েছিলাম যে, আমরা একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ওকে সামনে আনার, হয়তো হচ্ছিল না কোনোভাবে। আমি তো অলরেডি তিন বছর ওয়েট করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পরেও কিন্তু আমি কারো বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি, আজকেও করছি না। না হলে ও হয়তো কখনো কোনো সময় প্রশ্ন করবে, মা তুমি তো কোনো কথা বলোনি কখনো।’
সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকার শাকিব খান ১৫ হাজার ডলারের মতো দিয়েছিলেন জানিয়ে বুবলী বলেন, ‘সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকার সময়টাতে অনেক বড় অংকের খরচ হয়েছে। প্রায় এক বছরের মতো থাকতে হয়েছিলো। তখন তিনি (শাকিব) ১৫ হাজার ডলারের মতো হেল্প করেছিলেন। বাকি প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মতো আমি নিজে বহন করেছিলাম। টাকার অংকটাও বললাম, কারণ এটা নিয়ে অনেক ভুল নিউজ হয়েছে। গিফট বা উপহারের বিষয়গুলো আলাদা। তবে আর্থিক সহায়তা কখনও নিইনি।’
