ঈদে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার নাম জাল টাকা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৩১, ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম

ঈদে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার নাম জাল টাকা!

রোজার মাস চলছে। রোজার শেষেই আসবে পবিত্র ঈদুল ফিৎর। তাই রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলো ক্রেতার জন্য নানারকম পোশাক, প্রসাধনীসহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের সম্ভার নিয়ে সেজে উঠেছে। গত দুই বছরে করোনা মহামারিতে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে ঈদকে ঘিরে শহর থেকে গ্রাম, সবখানেই বাড়ছে লেনদেন, প্রাণচাঞ্চল্য, হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বিক্রিবাট্টাও।

গত রোজার ঈদে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। সব মিলিয়ে ঈদের অর্থনীতির আকার তখন দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। মহামারির কারণে তখন মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তাই সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করেই কেনাকাটা করেছে মানুষ। এবার ঈদ অর্থনীতির আকার বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। কিন্তু এত আশাবাদের পরও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন অন্যরকম এক দুশ্চিন্তায়।

এরকমই এক দুশ্চিন্তার কথা জানালেন রাজধানী সুপার মার্কেটের কাপড়ের দোকানি ইউসুফ মিয়া। মার্কেটের বাইরে অস্থায়ীভাবে দোকান দিয়ে কাপড় বিক্রি করেন তিনি। বললেন, সারাদিন যত টাকা বিক্রি করি না কেন, একটা আতংক থাকেই। সেটি হলো জাল টাকা। মার্কেটের ভেতরের দোকানে টাকা চেক করার মেশিন থাকে। তাই টাকা জালকারীরা স্বল্প টাকার কিছু একটা কিনে আমাদের জাল টাকার বড় নোট গছিয়ে দেয়। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের তখন করার কিছু থাকে না। কাস্টমার বেশি থাকলে অনেক সময় চোখের দেখায় জালনোট ধরাও সম্ভব হয় না। যখন পাইকার বা কারখানা মালিকদের টাকা দিতে যাই, তখন হয়ত ধরা খায়। সারাদিনের লাভের অংশই শেষ হয়ে যায় তখন। 

নিউর্মাকেটের এক দোকানি জানালেন, ঈদ সামনে রেখে তাঁর দোকানে ৫০ লাখ টাকার মাল তোলা হয়েছে। দোকানে কর্মরত আছেন তিনিসহ ৯ জন। বিভিন্ন কোম্পানি, এজেন্ট, গামেন্টস মালিকদের কাছ থেকে কিছু ধারে, কিছু ব্যাংক লোনে মাল তুলেছেন তিনি। এত বড় দোকান তবুও চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই একটা জাল নোট যদি কোনো কারণে ক্যাশে রিসিভ করে ফেলে, তখন প্রতিষ্ঠানও লসে পড়ে। পয়লা রোজাতেই ৫০০ টাকার একটি নোট জাল রিসিভ হয়। সেই ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে নোটটি চারদিকে ফুটো করে ড্রয়ারে রেখে দেওয়া হয়েছে।

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. মঞ্জুর আহমেদও জাল টাকার কারণে অর্থনীতির একই ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করেন। সাধারণ মানুষ ছাড়াও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জাল টাকা ঢুকে যাওয়ার পেছনে কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাত থাকতে পারে। 

জাল নোট চক্রের সদস্যরা মাঝে মধ্যে ধরা পড়ার পর মামলা হলেও তদন্ত বেশি দূর আগায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে নৌবন্দরে কন্টেইনার থেকে ২ কোটি ৭১ লাখ ৫০০ ভারতীয় জাল রুপি আটক করা হয়। ওই মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, দুবাই কেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট এর সাথে জড়িত। এরপর তদন্ত নানা কারণে থেমে রয়েছে। 

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাল টাকা বা জাল রুপি- এটা অর্থনীতির জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। জাল টাকা ও আসল টাকার মধ্যে যদি পার্থক্য না করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, অন্যদিকে এ টাকা দেশের ক্ষতি ও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার করার আশঙ্কা রয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, জাল নোট কারবারীদের গ্রেফতার সক্রিয় রয়েছে সিআইডিসহ পুলিশের একাধিক টিম। এর সাথে জড়িতদের অনেকেই ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করায় এদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গ্রেফতারকৃতরা যাতে দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আসতে না পারে সে জন্য কাজ করা হচ্ছে।

রোজার ঈদে এই চক্রের অপতৎপরতা প্রতিরোধে দেশে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য বিশেষ কয়েকটি নির্দেশনাও পালন করতে বলা হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীতে ৫৮টি স্থানে জাল নোট প্রতিরোধে ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ভিডিও বিভিন্ন ব্যাংক ও জনগণের সামনে প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ভিডিও চিত্র রোজার মাসে ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাগুলোর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বগুড়া জেলাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমস্থল, রাস্তার মোড়ে সন্ধ্যার পর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা করে প্রচার করতে হবে।

দেশের ব্যাংকগুলোর শাখায় গ্রাহকদের জন্য স্থাপিত টিভি মনিটরগুলোতে ভিডিও চিত্রটি পুরো ব্যাংকিং সময়ে দেখাতে হবে।

ব্যাংকের শাখাগুলোতে উচ্চ মূল্যমানের নোট গ্রহণ ও প্রদানকালে এবং এটিএম মেশিনে টাকা ফিডিংয়ের পূর্বে আবশ্যিকভাবে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন দ্বারা নোট পরীক্ষা করতে হবে।

রমজান মাস শেষ হওয়ার পর ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে আলোচিত নির্দেশনা পরিপালনের স্বপক্ষে একটি সচিত্র প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে জমা দিতে হবে।

Link copied!