করোনায় ঘরবন্দি: কেমন আছেন স্কুলে যাওয়া শিশুদের মা

চন্দ্রিমা চৌধুরী

আগস্ট ৯, ২০২১, ১১:০০ পিএম

করোনায় ঘরবন্দি: কেমন আছেন স্কুলে যাওয়া শিশুদের মা

মুগদা মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত চিকিৎসক ডা. নওশীন ইসলাম। এ পরিচয় ছাড়াও তার আরেক পরিচয় রয়েছে। তিনি একজন মা। তার মেয়ে জয়ি বেসরকারি একটি স্কুলে কেজি শ্রেণীতে পড়ছে। করোনা মহামারির পর থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই দিনের একটা বড় সময় স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ছোটাছুটি করা জয়ির জীবনও থমকে গেছে।

জয়ীর মত এমন হাজার হাজার স্কুল-গামী শিক্ষার্থী যাদের সুন্দর শৈশব থমকে গেছে করোনা থাবায়। এ সকল শিক্ষার্থী দিনের একটা বড় অংশ কাটাত স্কুলে। হঠাৎ চার দেয়ালের খাঁচায় বন্দি হওয়া শিশুদের সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে মায়েদের।

ডা. নওশীন বলেন, 'এত দিন বাসায় থেকে থেকে ওরাও এখন কথা শুনতে চায় না। বাচ্চারা খিটখিটে হয়ে গেছে। এ ছাড়াও সকাল থেকে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। সেখানেও অভিভাবক কারো না কারো উপস্থিত থাকতে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, ‘ঘরে থেকে বাচ্চাদের মানসিক অবস্থার যেমন অবনতি হচ্ছে। তেমনি আমাদেরও হচ্ছে। তবে ওদের সাথে রাগ হয়ে কথা বললে আরও খারাপ হবে। তাই এখন আরও সংযত হয়ে বুঝে ওদের সাথে কথা বলতে হয়।'

মাসিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট ডা. লিসা ডামুর ইউনিসেফকে বলেন, ‘বাচ্চারা গাড়ির যাত্রী 

এবং আমরা সেই গাড়িটি চালাচ্ছি। এ কারণে আমরা যদি উদ্বিগ্ন হই, তাহলে আমাদের গাড়িতে থাকা শিশুরা নিরাপদ বোধ করতে পারবো না। তাই নিজেদের উদ্বেগ কখনোই তাদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না।বরং সময় সময় তাদের মনের অবস্থা জানতে সম্পর্ক আরও পোক্ত করতে হবে।

তবে চলতি করোনা মহামারী যেভাবে চাকুরী, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ নানাবিধ ভাবে আঘাত হেনেছে। এমন অবস্থায় নিজের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা মায়েদের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ বেশি ভাগ শিশুরাই মায়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই মায়েদের যে কোন ধরনের আচরণ শিশুদের সরাসরি প্রভাব ফেলে।

অন্যদিকে কোন কোন মায়েরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তেমনি একজন গুল বাহার ফেন্সি। তিনি বলেন, ‘করোনায় লকডাউনে প্রথম দিকে একটু আতঙ্কিত ছিলাম। লক ডাউন ঘোষণা করলে সবাই বাসায় বন্দি হয়ে যায়। বাচ্চারা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে যাচ্ছিল। তবে এখন সে প্রবণতা একটু কমেছে। নিজেরা এখন ঘরের মধ্যেই ক্রিকেট খেলে মাঝে মাঝে। তবে সবাইকে একসাথে বাসায় পেয়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। সারাদিন বাচ্চারা নানান কাজে বাইরে থাকত। আমি তো প্রায় ওদের চেহারাই ভুলে যাচ্ছিলাম।‘

প্রতিনিয়ত যেভাবে সনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই প্রাণঘাতী রোগের সঙ্গে প্রতি নিয়ত লড়াই করে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি এখন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যও হুমকির মুখে। তাই এ ব্যাপারে সামষ্টিক সচেতনতা না বাড়লে পরিস্থিতি আরও  খারাপ হতে পারে।

Link copied!