বিটকয়েন : প্রতারণার নতুন হাতিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ৪, ২০২১, ১০:২০ পিএম

বিটকয়েন : প্রতারণার নতুন হাতিয়ার
https://www.youtube.com/watch?v=GYGsODXhzBY
 

ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপটোকারেন্সির মধ্যে জনপ্রিয় বিটকয়েন। তবে এর কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন না থাকা ও কোন রেকর্ডভুক্ত না থাকায় প্রতারণার নতুন হাতিয়ার হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মূলত গ্রাহকদের বিট কয়েন সম্পর্কিত স্বল্প জ্ঞান ও বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে নতুন প্রতারণা চক্র গড়ে উঠেছে।

বিটকয়েন কি?

ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো বিট প্রচলন করেন। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। 

বিটকয়েনের লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে বা মোবাইলে করা হয়। এরপরপরই মাইনিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিটকয়েনের পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে। একজন্য ব্যবহারকারী কয়েকজনের মাঝে এটা ছড়িয়ে দিয়ে তার বিট কয়েনের পরিমান বৃদ্ধি করে।

বাংলাদেশে বিটকয়েন উৎপাদনের সম্ভাবনা কম

ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকলের পর মাইনিং পদ্ধতিতে বিটকয়েন উৎপাদন হয়। যার ফলে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। এরই সাথে নির্দিষ্ট ইউজারদের সকলেরই এমন সুবিধার আওতায় থাকার পাশাপাশি নিয়মিত বিটকয়েন আদান প্রদান করা লাগে। বিশ্বের ১৪০ টি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে গতি ও সংযোগের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬ তম। যার ফলে এই ধরনের সংযোগ ও গতি দিয়ে বিটকয়েন উৎপাদন অনেকটাই অসম্ভব।

আউটসোর্সিংই কি বিটকয়েনের উৎস?

বিট কয়েন ডার্কওয়েব থেকে ক্রয় বিক্রয় করা গেলেও বর্তমানে সাধারন ওয়েবেও লেনদেন হচ্ছে। সম্প্রতি অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিটকেয়েনের আধিক্য বেশি দেখা যায়। এটার কোন উৎস ও উপাত্ত না থাকায় আলাদাভাবে ট্যাক্স দেয়া লাগছে না বিধায় এর প্রসার হচ্ছে। এছাড়া ডার্ক ওয়েব থেকেও কেউ কেউ কিনছে।এদিকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বিট কয়েনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

ডিকোডস্ ল্যাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ মঈনুদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিটকয়েন মূলত আউটসোর্সিং যারা করে তারা এর ব্যবহার সম্পর্কে জানে। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকরা এই কয়েন দিয়ে প্রতারণা ব্যতীত আর কিছুই পাবে না। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় বিটকয়েন উৎপাদন করাটাও দুষ্কর। এছাড়া যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাই এই কারেন্সিতে লেনদেন না করাই শ্রেয়।

প্রতারণাই মূল লক্ষ্য

গত রবিবার (২ মে) বিট কয়েনের প্রতারণা চক্রের ১২ জন সদস্যকে আটক করা হয়। এছাড়া জানুয়ারিতেও গাজীপুর থেকে আটক হয় একজন। এরা বিটকয়েনের নাম করে অনলাইনে বিভিন্নজনকে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। মূলত বর্তমানে (৪ মে) একটি বিটকয়েনের দাম ৪৭ লাখ টাকার বেশি। প্রতারক চক্র কম মূল্যে বিট কয়েনের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।

বিটকয়েন লেনদেন অবৈধ

২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েনে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্কতা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ভার্চুয়াল মুদ্রা কোন দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না বিধায় এর বিপরীতে আর্থিক দাবির কোন স্বীকৃতিও নেই।ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে। এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক এবং আইনগত ঝুঁকি রয়েছে বলে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনের কোন অনুমোদন নেই। যেহেতু অনুমোদন নেই, সুতরাং এই জাতীয় লেনদেন বৈধ নয়।

বিটকয়েনই কি একমাত্র ডিজিটাল মুদ্রা?

বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ৫ হাজারের মত ক্রিপটোকারেন্সি রয়েছে। তবে এর মধ্যে এখন বিটকয়েনই জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে বিটকয়েনকে পিছু হটিয়ে ইথেরিয়াম ক্রিপটোকারেন্সিতে শীর্ষ অবস্থানে গিয়েছিল। তবে বিটকয়েন একসপ্তাহের মধ্যেই সব হারানো স্থান দখল করে নেয়। বর্তমানে বিটকয়েন,ইথারিয়াম,বাইনান্স,এক্সআরপি,ডজকয়েন,থিটার,কারডানো, পোলকাডট,উইন্সওয়াপ,লাইটকয়েন জনপ্রিয়তার শীর্ষ দশে রয়েছে।

Link copied!