শতভাগ শ্রমিক নিয়েই কাজ চালাবে কারখানাগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১, ২০২১, ০২:৪৮ এএম

শতভাগ শ্রমিক নিয়েই কাজ চালাবে কারখানাগুলো

সরকারি নির্দেশনা থাকলেও উৎপাদনশীল খাতগুলো শতভাগ শ্রমিক নিয়েই কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎপাদন কাজ চলবে। গত মঙ্গলবার পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো শতভাগ শ্রমিক কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

অর্ধেক শ্রমিকের কাজ করা নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভাবনা

তৈরি পোশাক কারখানা ৫০ নয়, শতভাগ শ্রমিক নিয়েই উৎপাদন কার্যক্রম চালাবে। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর শীর্ষ নেতৃত্ব মঙ্গলবার (৩০ শে মে) বলছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, অর্ধেক জনবল দিয়ে কারখানা পরিচালনার নির্দেশনাটি তৈরি পোশাক খাতের বেলায় প্রযোজ্য হবে না। তবে কারখানাগুলোতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতে হবে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল এক নির্দেশনায় বলেছে, করোনার প্রথম ঢেউ সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনার প্রথম ঢেউয়ে পোশাকশিল্পে সংক্রমণের হার ছিল খুবই সামান্য অর্থাৎ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আশা করা যায়, করোনার প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে আমরা যোগাযোগ করেছি। আমরা সব শ্রমিক নিয়েই উৎপাদন চালাতে পারব। তবে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সব সদস্যকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ট্যানার্স এসোসিয়েশনর সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি যাতে না হয় এজন্যই পুরোপুরি উৎপাদন কাজ সচল রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শ্রমিকদের পুনরায় বেকার হবার শঙ্কা

করোনা মহামারীর সময় গত বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৮০ শতাংশ কারখানা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক সাময়িক বেকার হয়ে পড়েছে বলে ব্রাকের গবেষণায় উঠে আসে। এখন যদি অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে কাজ করতে হয় তাহলে ৫০ লাখ শ্রমিক অনানুষ্ঠানিকভাবে বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়া হোম অফিসসহ নানা কারনে বেতন হ্রাস, অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিত করায় এই দিকে কম ঝুঁকছে চাকরিজীবিরা।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রণোদনা পেয়েও প্রথম ধাপে শ্রমিক ছাটাই ও বেতন হ্রাস করেছে অনেক কারখানা। চলতি অবস্থায় তাই কোন শ্রমিকই ৫০ ভাগ সুবিধার আওতায় আসতে চাইবে না। তাই এ বিষয়টি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। 

বাংলাদেশের শ্রমশক্তির সার্বিক অবস্থা

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকসহ বিভিন্ন খাতে ৩ কোটি ৮০ লাখ কর্মজীবি রয়েছে বলে বিবিএসের জরিপ জানায়। এর মধ্যে পোশাকখাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক রয়েছে। তবে বাকি ৩ কোটি ২০ লাখ কর্মজীবিদের বাসায় কাজ করার সুযোগ খুব স্বল্প প্রতিষ্ঠানই দিতে পারছে। এছাড়া উৎপাদনশীল খাতগুলোতে শ্রমিক পর্যায়ের কর্মী থাকে বিধায় এই সুবিধার আওতায় আনাটা দুষ্কর বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ খেলনা সামগ্রী উৎপাদন ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার বলেন, আমাদের কাঁচামাল পুরোপুরি চিন নির্ভর হবার কারনে প্রথম ধাপে কয়েকটা কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু শিথিল হবার পর সবাই বেশ কাঁচামাল জমা করে রেখেছে। যার ফলে অর্ধেক শ্রমিক কাজ করলে কাঁচামালের অপচয় হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমসচিব কে এম আবদুস সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে (ডিআইএফই) নির্দেশনা পাঠিয়ে দিয়েছি। এটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। ব্যতিক্রম কিছু হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য নতুন করে দেশে আবার করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় সোমবার সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে পরিচালনার পাশাপাশি গর্ভবতী, অসুস্থ, ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাড়িতে রেখে কাজ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Link copied!