পাগলা মসজিদ: দুইশ লোকে ১০ ঘন্টায় গুনে মিলল ৪ কোটি টাকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ১০:০৭ পিএম

পাগলা মসজিদ: দুইশ লোকে ১০ ঘন্টায় গুনে মিলল ৪ কোটি টাকা

আবারও কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে মিলেছে রেকর্ড পরিমাণ টাকা! এবার মিলেছে ২০ বস্তা টাকা। আর ২০ বস্তার টাকা গুনে পাওয়া গেছে ৪ কোটিরও বেশি টাকা যা আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। গণনা শেষে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। তিন মাস পর শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় দানবাক্স খোলা হয়। বাক্স খোলার পরই শুরু হয় গণনার কাজ। আর একাজে যোগ দেন দুইশত লোক।

সারা দিন গণনা শেষে যার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। টাকাগুলো গুনতে দুই শতাধিক লোকের লেগে যায় প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেষ হয় গণনার কাজ।

গত ১ অক্টোবর খোলা হয়েছিল মাজারের সিন্দুক। ওইদিন পাওয়া যায় তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। এর আগে ২ জুলাই সিন্দুকে পাওয়া যায় তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। তারও আগে মার্চে পাওয়া যায় তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তবে এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পাওয়া গেল চার কোটিরও বেশি টাকা। এত টাকা মসজিদের ইতিহাসে আর কখনো পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,কেবল মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের লোকজনও পাগলা মসজিদে টাকা-পয়সা দান করে। এই মসজিদটি সব ধর্মাবলম্বীর কাছে পবিত্রতার প্রতীক ও আস্থার জায়গা করে নিয়েছে। তাদের ধারণা, এখানে দান করলে আয়-উন্নতি বৃদ্ধিসহ বিপদ-আপদ দূর হবে। পূরণ হয় মনোবাসনা। শুধু টাকা নয়, সঙ্গে সোনা-রুপার অলংকারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও।

এছাড়াও পাওয়া গেছে অনেক চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন প্রেম-বিরহ, স্বামী-স্ত্রীর ভুল-বোঝাবুঝি, পেশা ও আয়-রোজগারের সমস্যা, শত্রুতা, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আবেদনসহ অনেক কিছু লেখা রয়েছে। এ ঘটনা অন্য মসজিদের দানবাক্সে সাধারণত দেখা যায় না।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে আটটি দানবাক্স আছে। প্রতি তিন মাস পর পর এই বাক্সগুলো খোলা হয়। এবার দানবাক্স খোলা হয়েছে ৩ মাস ৬ দিন পর। টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, সকাল পৌনে ৯টায় ৮টি দানবাক্স খুলে ২০ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। পরে চলে গণনার কাজ।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়। এ ছাড়া এই মসজিদের জমানো টাকা দিয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ এখানে সুন্দর একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে এক শ কোটির বেশি টাকার প্রয়োজন হবে।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি বানানো হয়েছে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন।

Link copied!