দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে উধাও সমাজসেবা কর্মকর্তা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে উধাও সমাজসেবা কর্মকর্তা

ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক দুস্থ ও ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাত থেকে অন্তত ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনি নানা অজুহাতে তার কার্যালয়ের কর্মচারী ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোজাম্মেল হক গত ২৮ জুলাই থেকে অফিসে আসছেন না। এর আগে তিনি কার্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে থাকা ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ২৯ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ। কমিটি ১৪ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের কাছে জমা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপপরিচালক শাহ আলম। খবর প্রথম আলো।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মোজাম্মেল হক ২০২৪ সালের মে মাসে মোহনগঞ্জে যোগদান করেন। এর আগে দুর্গাপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাকে তিরস্কার করা হয় এবং পরে মোহনগঞ্জে বদলি হন। এখানে যোগদানের পরও অনিয়ম চালিয়ে যান তিনি।

অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির ৪ লাখ ৭৫ হাজার, মাতৃকেন্দ্রের ঋণ কর্মসূচির ৫ লাখ ১৩ হাজার, ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের ১ লাখ ৪০ হাজার এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ২২ লাখ ৪৭ হাজারসহ মোট ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুল তালুকদার ও সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুর রহমান। তদন্তে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে।

কার্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, ‘একজন কর্মকর্তা এমন হতে পারেন, তা কখনো ভাবিনি। আমাদের সবার কাছ থেকেই তিনি দুই লাখ টাকার বেশি নিয়েছেন।’

অফিস সহকারী নিজামুল আজাদ বলেন, ‘মোজাম্মেল স্যার ২৭ জুলাই পর্যন্ত অফিস করেছেন। এরপর আর আসেননি। তিনি শুধু কর্মচারীদের কাছ থেকে নয়, মায়ের অসুখসহ নানা অজুহাতে উপজেলা পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন।’

উপজেলার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিবারের কারও অসুস্থতার কথা বলে টাকা চাইলে কে না দেবে বলেন? আমিও কয়েক হাজার টাকা দিয়েছি। এখন শুনছি অনেকের কাছ থেকেই তিনি এভাবে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে মোজাম্মেল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম বলেন, মোজাম্মেল হক ৩৩ লাখ টাকার বেশি অবৈধভাবে অফিসের ব্যাংক হিসাব থেকে তুলেছেন বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার কোনো উপায় নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, চাকরি যাবে, গ্রেপ্তার হবেন এবং টাকা ফেরত দিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

Link copied!