ডিসেম্বর ১, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এর গৌরবের অধ্যায়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ যাবৎ ২৮ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। শতবর্ষ উদযাপনের আগে দ্য রিপোর্টে সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষেও শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ করছে। এর কারন কি?
উপাচার্য : আবাসন, লাইব্ররি, চিকিৎসাসুবিধা,পরিবহন,শ্রেণীকক্ষ যেই খাতই ধরুন এগুলো কি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করতে পারছি। এক বাক্যে না । এই ধরনের কম সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোন শিক্ষার্থীরা যে মেধার বিকাশ করতে পারে তা নজিরবিহীন। একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্যাম্পাস। সেই ক্যাম্পসের বৈশিষ্ট্য সেটা লাইব্রেরি,সেমিনার,গবেষণাগার,পরিবহন সেই মানদন্ডে পৌছাতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাক্ষাৎকারের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন।
দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষণা কম হচ্ছে কেন ?
উপাচার্য : মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের পূর্বশর্ত হলো ভাল মানের গবেষণাগার থাকা। ভালমানের গবেষণাগার পরিচালনার জন্য ভাল ব্যবস্থাপনা,গবেষকদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এগুলো নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যা প্রয়োজন আছে তা আমরা করতে পারছি না। এটাই বাস্তবতা। শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষা ও গবেষণার অনুকুল পরিবেশ ইত্যাদি নিশ্চিতে আমাদের বেশ ঘাটতি রয়েছে।
দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে কেন?
উপাচার্য : সর্বশেষ উপাচার্য অধিবেশনে আমরা বেশ কিছু বিষয় বলেছি। আসলে র্যাংকিং নির্ধারনের বেশ সূচক রয়েছে। যতদিন সেগুলোর সমাধান করতে না পারব ততদিন আমাদের আন্তর্জাতিক অবস্থান তৈরি হবে না। আমরা শুধু বিদেশি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তুলনা দেই। কিন্তু এর আগে দেখতে হবে তাদের তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কতটুকু সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের শিক্ষক কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যেই নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তাদের অনেক কিছু নিশ্চিত করতে পারিনা। এত প্রতিকূলতা এত অনুকূল পরিবেশের অভাব নিয়ে যে সাফল্য দেখায় সেটাই নজিরবিহীন।
দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কি কোন বিভাগ বিলোপ করা হবে ?
উপাচার্য : অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করেন। যে এই বিভাগের কি দরকার, এই বিভাগের প্রয়োজনীয়তা আছে কি? কিন্তু আমি সেটির সাথে এক মত নই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের পাঠ্যক্রম থাকবে। সেটির বাজার চাহিদার কতটুকু আছে তার ওপর নির্ভর করে বিভাগ থাকবে না। হয়ত সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়। কোন কোন বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। আবার কোনটার চাহিদা কম রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কোন বিভাগ বিলোপ সাধন করবে না। বিশ্ববিদ্যালয় সকল বিভাগকে লালন করবে। তবে এটা একটি সুষম বন্টন করতে হবে। যেন কোন শিক্ষার্থী বোঝা না হয়। দেশ ও ভবিষতে জন্য বিশেষ কিছু করতে পারে।
দ্য রিপোর্ট : শিক্ষার্থী সংখ্যা কি সক্ষমতার তুলনায় বেশি?
উপাচার্য : ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এসুরেন্স সেল এর কতগুলো প্যারামিটার আছে। তা অনুসারে ছাত্র সংখ্যা নির্ধারণ করা জরুরী। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থী সক্ষমতার তুলনায় বেশি। যদি আমরা শিক্ষার গুণগত মান, পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমান ভাল অবস্থায় রাখতে চাই তাহলে ভর্তিসহ নানা ক্ষেত্রে সুসমন্বিত উদ্যোগ লাগবে।
দ্য রিপোর্ট : এখনও বিশ্বমানের ওয়েবসাইব প্রস্তুত হয়নি কেন?
উপাচার্য : ওয়েবসাইট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটওয়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে জানে। সেখানে খারাপ প্রদর্শন কাম্য নয়। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটকে ভাল মানে পৌছাতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই আমাদের ওয়েবসাইট আন্তর্জাতিক মানের হবে।
দ্য রিপোর্ট : বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা কেন করছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?
উপাচার্য : ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া এলায়েন্স আমাদের সংস্কৃতিতে নাই। বিভিন্ন শিল্পখাত থেকে আয়ও কিন্তু র্যাংকিংয়ের একটা সূচক। এর মানে হলো কোন প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বা উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগ করে। এর অর্থ যখন বিশ্ববিদ্যালয় সেই গবেষণা বা উদ্ভাবন করে তারই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যায়। সেখান থেকে মোট আয়ের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যায়ও কিছু অংশ পায়। এই ধরনের সংস্কৃতি আমাদের এখনও গড়ে ওঠেনি।
দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্যদের করণীয় কি হবে?
উপাচার্য : আমাদের ১০০ বছর উদযাপনের জন্য পূর্বপুরুষরা যেমন ভিত গড়ে দিয়েছে। আমাদেরও দায়িত্ব হল আগামী ১০০ বছর পর যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও জাঁকজমকভাবে উদযাপন করে সেটির ভিত গড়ে দেয়া।