ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী তাহমিদের ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৭ আগস্ট। গতকাল সোমবার পর্যন্তও তিনি সুস্থ হননি। এই শিক্ষার্থী জানান, পরিচিত আরও কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন গত দুই সপ্তাহের মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাহমিদ একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. রাজিয়া রহমান গতকাল বলছিলেন, ‘জুন ও জুলাই মাসে যে হারে জ্বর নিয়ে রোগী আসত, এখন তা কিছুটা কমেছে। তবে ডেঙ্গু এখনো আছে।’ খবর প্রথম আলো।
২০০০ সালে দেশে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয় রাজধানী ঢাকা থেকে। এরপর প্রায় প্রতিবছর রোগীর সংখ্যায় ঢাকা শীর্ষে ছিল। কিন্তু গত বছর থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রাজধানীর বাইরে বেশি। তবে দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব।
ডেঙ্গু আবার ঢাকামুখী?
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৭৫৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৬২৫, আর ঢাকায় ৬ হাজার ১৩৩। মোট আক্রান্তের ২৩ শতাংশ রাজধানীর। তবে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল আটটা থেকে গতকাল সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮০ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০৫ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে পরিচিত বরিশাল বিভাগের বরগুনায় এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ জন, পুরো বিভাগে ৬৭ জন।
১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৫ জন।
এডিসের লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে শুধু উত্তরে মশার জরিপ হয় নিয়মিত। সর্বশেষ ৮ থেকে ১২ আগস্টের মশার নজরদারির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে একটিতে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বা ব্রুটো ইনডেক্স সর্বোচ্চ ছিল প্রায় ৬৭ শতাংশ। ব্রুটো ইনডেস্ক ২০–এর বেশি হলেও তা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই পাঁচ এলাকার মধ্যে সর্বনিম্ন ব্রুটো ইনডেক্স ছিল প্রায় ২৭।
উত্তরে লার্ভার ঘনত্ব যে বেশি তা স্বীকার করে উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে ঘন ঘন। বৃষ্টির সঙ্গে এডিসের বংশবৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক আছে। তাই এ নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেও এর প্রভাব পড়েছে। খবর প্রথম আলো।
উত্তর সিটির মশার ঘনত্ব নিয়ে একটি চিত্র পাওয়া গেলেও দক্ষিণ সিটিতে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থাই নেই। ওই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান তিনটি স্থানই শূন্য। তবে এ অবস্থার মধ্যেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান জোরদার আছে বলে দাবি করেন দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম।
এরই মধ্যে রাজধানীতে কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি হয়ে গেছে। গত রোববার রাজধানীতে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এটি ছিল দেশেরও সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এই বৃষ্টির অন্তত দুই সপ্তাহ পরে এডিস মশার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর তাতে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে গতানুগতিক ব্যবস্থা এখনো বহাল আছে। আর তাতেই রাজধানীতে এর প্রকোপ বাড়ছে।