যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। এতে একজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। তারা তিনজনই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ।
শনিবার (১২ জুলাই) স্থানীয় সময় সোয়া ছয়টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার শহরে একটি সমাবেশে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে এই হামলা হয়।
হামলায় প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে যে এমন হামলার ঘটনা ঘটতে পারে সেটা অবিশ্বাস্য।”
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হামলাকারী নিজেও সমাবেশস্থল থেকে ২০০-৩০০ ফুট দূরে নিহত হয়েছে বলে সিবিএস নিউজ জানায়। হামলার বিবরণ দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমাকে লক্ষ্য করে একটি গুলি করা হয়েছে যা আমার ডান কানের ওপরের অংশে বিদ্ধ হয়েছে।”
সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ভিন্ন কিছু একটা ঘটতে চলেছে। আমি গুলির শব্দ শুনতে পেলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি বুলেট আমার চামড়া ভেদ করে ছিঁড়ে যাচ্ছে বলে বুঝতে পারলাম। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে, পরে আমি বুঝতে পারি, (আমার সঙ্গে) কী ঘটছে।”
এদিকে হামলার পর পরই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের পাশাপাশি অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমি সমাবেশে নিহতের পরিবারের প্রতি এবং গুরুতর আহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাতে চাই।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে অস্থায়ী মঞ্চে হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে ‘নিন্দনীয়’ একটি কাজ। স্বস্তি এসেছে যে ট্রাম্প ‘গুরুতর’ আহত হননি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা তার জন্য প্রার্থনা করছি। তার পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় অন্যান্য যারা আহত হয়েছেন তাদেরকেও সমবেদনা জানাচ্ছি। নৃশংস হামলার সম্মুখীন হয়ে যারা আহত হয়েছেন।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে হামলার ঘটনাকে নৃশংস উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কোনও স্থানে এ ধরনের সহিংসতা কাম্য নয়। এটা এক ধরনের অসুস্থতা। আমি শুধু বাস্তবে কি হয়েছে, কারা হামলার সঙ্গে জড়িত- সেটা খতিয়ে দেখবো। ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত করে দেখা হবে।
অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি বিগস বিবিসির সংবাদদাতা ক্রিস্টাল হায়েসকে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “রাজনৈতিক সমাবেশ, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্যবন্ধন ছিল, আজকের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পর থেকে সেই ধারণা একেবারেই পাল্টে গেল।”
বিবিসির সংবাদদাতাকে তিনি আরও বলেন, “আমি আপনাকে শুধু এটুকুই বলবো, এখন থেকে সমাবেশ করার জন্য ঘরের ভেতরই হবে উপযুক্ত স্থান। যেখানে আমরা নিরাপদ। অন্তত বাইরে সমাবেশ করার চেয়ে তো নিরাপদ।”
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান রনি জ্যাকসন ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার ভাগ্নে ট্রাম্পের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। হামলার সময় একটু বুলেট এসে পড়ায় ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন। এখন আমার ভাগ্নের ঘাড় থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা বুঝতে পেরেছি, পেছন দিক থেকে হামলা করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে হামলার ঘটনায় পেনিসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জোশ স্যাপিরো ও বাটলার অঙ্গরাজ্যের মেয়র বব ড্যান্ডয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন জো বাইডেন। তবে তাদের সঙ্গে ফোনালাপে কি কথা হয়েছে সেটা খোলাসা করে বলেননি হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।