মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী কে হচ্ছেন-ট্রাম্প নাকি অন্য কেউ?

মিজানুর রহমান খান

জুলাই ৬, ২০২৩, ০১:৩৯ এএম

মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী কে হচ্ছেন-ট্রাম্প নাকি অন্য কেউ?

এখনও প্রায় দেড় বছরের মতো সময় বাকী। কিন্তু এখনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে দেশে-বিদেশে জোর আলোচনা হচ্ছে? সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পতো আগেই বলে দিয়েছেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লড়াইয়ে এবারও কোমর বেঁধে নামবেন। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দলের আরও কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সিএনএন, সিবিএস ও নিউইয়র্ক টাইমসসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ঘেঁটে মার্কিন নির্বাচনের আপডেট তুলে ধরা হল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পাঠকদের জন্য।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন নির্বাচন। এর আগেই দলের মনোনীত প্রার্থী হতে মরিয়া হয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের ২৫ মার্চ টেক্সাসের ওয়াকোতে প্রথম নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন ৭৭ বছর বয়সী এই নেতা। ২০২০ সালের মতো এবারও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার স্লোগান ‘আমেরিকাকে আবার মোড়ল বানান’ (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন)।’

ট্রাম্প মানেই তুমুল আলোচনা। দেশে তো বটেই, গোটা বিশ্বেই ট্রাম্প এক আলোচিত ও সমালোচিত নাম। এবারও ট্রাম্প আলোচনায় রয়েছেন। নিজের বাসভবন থেকে গোপন রাষ্ট্রীয় নথি উদ্ধারের ঘটনায় ঝড়ের মুখে আছেন তিনি। এক শ্বেতাঙ্গ উগ্র জাতীয়তাবাদীর সাথে নৈশভোজ যোগ দেওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। 

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে যারা সহিংসতা করেছিল তাদের পক্ষ সমর্থন, সহিংসতার পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সাথে যৌন সম্পর্ক, বিষয়টি গত ভোটের আগে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, বড় অঙ্কের অর্থ ঘুষ দেওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই। এসব ঘটনার তদন্ত এখনো চলমান। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগের তদন্তও চলছে। প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাম্প তারপরও কি মনোনয়ন পাবেন—বিরাট কৌতুহলী জিজ্ঞাসা এখন সবার।

মাইক পেন্স

প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতা মাইক পেন্স। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর পেন্স ট্রাম্পের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন এককালে। ২০২১ সালে বাইডেনের কাছে হারার পর ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল। 

নজিরবিহীন ওই ঘটনাটি ভালভাবে নিতে পারেননি তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স। এরপর থেকেই ট্রাম্পের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় পেন্সের। এরইমধ্যে একধিক মার্কিন জনসমীক্ষায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৬৫ বছর বয়সী মাইক পেন্সকে এগিয়ে রাখছেন মার্কিনীরা।

রোনাল্ড ডিসান্টিস

নির্বাচনে লড়তে দলের প্রার্থীতার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর রোনাল্ড ডিয়ন ডিসান্টিসও। এরই মধ্যে প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই যুব নেতা। এতে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন বলে মনে করছেন মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

হার্ভার্ড ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে মার্কিন রাজনীতিতে নবাগত বলেই মনে করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যও ছিলেন। সে সময় অবশ্য তিনি ছিলেন খুবই স্বল্প পরিচিত প্রতিনিধি-পরিষদ সদস্য। তবে ২০১৯ সালে গভর্নর হবার পর তিনি দ্রুত বিখ্যাত হয়ে উঠতে থাকেন। তরুণদের মধ্যে তার সমর্থক অনেক।

ক্রিস ক্রিস্টি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সময়ের খুব কাছের মানুষ ছিলেন ক্রিস ক্রিস্টি। নিউজার্সি রাজ্যের সাবেক এই গভর্নর ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। পরে তিনি সমর্থন দেন ট্রাম্পকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের সময় তার ট্রানজিশন টিমের প্রধান ছিলেন ক্রিস্টি। তা ছাড়া ২০২০ সালের নির্বাচনের আগেও বাইডেনের বিরুদ্ধে বিতর্কের সময় ট্রাম্পকে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন। কিন্তু পাশার দান উল্টে যায় ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার পর। ওই ঘটনার পর থেকেই তিনি ট্রাম্পের কড়া সমালোচক হয়ে উঠেন।

ক্রিস্টি ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত নিউ জার্সি রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। এর আগেও ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে নিউ জার্সির শীর্ষ কৌঁসুলি ছিলেন তিনি।

টিম স্কট

সিনেটর টিম স্কট হচ্ছেন একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ যিনি মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ৫৭ বছর বয়সী টিম স্কট ২০১৩ সাল থেকে সিনেটে সাউথ ক্যারোলাইনার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনিও আছেন এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীতার দৌঁড়ে।

গত মে মাসে তিনি রিপাবলিকান মনোনয়ন পাবার লড়াইয়ে নামেন নগদ প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার হাতে নিয়ে। এই অর্থ তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন ভোটে ফান্ড কালেকশন একটি বড় ফ্যাক্টর। এ কারণে স্কটকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন অনেকে।

নিকি হ্যালি

গত ফেব্রুয়ারিতেই প্রার্থী হবার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেন নিকি হ্যালি। সরাসরি তিনি ট্রাম্পকে মোকাবিলা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ৫১ বছর বয়স্কা মিজ হ্যালিকে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাবনাময় নেতাদের মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়।

এক সময়ে ট্রাম্পের সাথে সুসম্পর্ক ছিল নিকি হ্যালির। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে নিকি হ্যালিকে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনোনীত করা হয়। সেই গুরু দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক নিকি হ্যালি। তার মেয়াদের সময় একটি আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা ছিল নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ফিলিস্তিনি দূত ভাষণ দেবার সময় নাটকীয়ভাবে তার কক্ষ ত্যাগ।

২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কম বয়সী গভর্নর নির্বাচিত হন নিকি হ্যালি। ২০১৫ সালে সাউথ ক্যারোলাইনার রাজধানী থেকে কনফেডারেট পতাকা অপসারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন।

 ‘ডার্ক হর্স’ প্রার্থী হিসেবে আখ্যা পাওয়া এই রাজনীতিক সম্প্রতি প্রচারণায় ‘নতুন প্রজন্মের’ মার্কিন নেতৃত্বের কথা বলেছেন। ৭৫ বছরের বেশি রাজনীতিবিদদের জন্য বাধ্যতামূলক মানসিক সক্ষমতা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষা প্রবর্তন করতে মার্কিন জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

আসা হাচিনসন

আসা হাচিনসন দুই মেয়াদে আরকানসাস রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। গত এপ্রিল মাসে তিনি প্রার্থীতার ঘোষণা দেন। সম্প্রতি এক মার্কিন টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হবার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন।

৭২ বছর বয়সী আসা হাচিনসন একজন সাবেক এটর্নি ও ব্যবসায়ী। রোনাল্ড রিগান প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি দেশের সবচেয়ে কমবয়স্ক ফেডারেল প্রসিকিউটর হয়েছিলেন। দুই মেয়াদে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আসা হাচিনসন সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের অভিশংসনের প্রক্রিয়াতেও একজন কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার জন্য রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেতে আরও প্রচারণা চালাচ্ছেন আইনজীবী ও টক রেডিও উপস্থাপক ল্যারি এল্ডার, ভার্জিনিয়ার গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিন, ব্যবসায়ী পেরি জনসন প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এছাড়া, সাবেক সফটওয়্যার নির্বাহী এবং বর্তমানে নর্থ ডাকোটার গভর্নর ডগ বারগাম, মায়ামির মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ, সাবেক টেক্সাস কংগ্রেসম্যান উইল হার্ড, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ ও টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের নাম শোনা যাচ্ছে প্রার্থীতার জন্য লড়ার।

তবে জনমত জরিপে এখনো এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দলের মনোনয়ন যিনি পাবেন তিনি খুব সম্ভবত মোকাবিলা করবেন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। কারণ তিনি এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

Link copied!