আগস্ট ২০, ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং জাতীয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৯ শতাংশই অসংক্রামক রোগের জন্য ব্যয় হয়। রোগ প্রতিরোধে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব বাড়ানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলছিলেন।
তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ৩৫টি মন্ত্রণালয় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অসংক্রামক রোগ হলে মানুষ উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়। কোনো ব্যক্তির ক্যান্সার হলে তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই সহায়হীন সম্বলহীন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অতি উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা নেওয়ারও প্রয়োজন হয়। আমাদের বিপুল অংকের টাকা চলে যায় বিদেশে এ সব রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে।”
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু নিয়ে আমরা সকলে আজ একত্রিত হয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ বলছি এ কারণে যে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ দরকার। দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে জাতীয় উন্নয়ন—কোনোটাই যথাযথভাবে করা যাবে না।" মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের তাগিদ দিয়ে ইউনূস বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।”
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই যে অসংক্রামক রোগ দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে সে কথাও উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে।
ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিপুল জনগোষ্ঠীর ছোট এলাকায় বসবাসের প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতি আরও সংকটময়। তাই এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের সাথেও নিবিড়ভাবে জড়িত।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ ভাগ ঘটে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে এবং এর মধ্যে শতকরা ৫১ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় ৭০ বছর বয়সের নিচে, যাকে আমরা অকাল মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করে থাকি।”
ইউনূস বলেন, তাই অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা যেমন উন্নত হওয়া জরুরি, তেমনি রোগগুলো যেন কম হয় অথবা না হয়, সেজন্য উপযুক্ত জনসচেতনতা এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করে তোলা দরকার। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এজন্য সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার। খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত—এমন প্রত্যেকটি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যেক খাত থেকে দরকার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নিবিড় উদ্যোগ। তাই এ সকল মন্ত্রণালয় চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নে কিছু বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকগুলোর বিষয়ে যথেষ্ঠ পরিমাণ সচেতনতা আছে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। অনেকেই সচেতন থাকলেও জীবনযাপনে হয়তো সেভাবে প্রতিফলন নেই। ফলে নানামাত্রিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
“সুবিস্তৃত জনসচেতনতা ও সকল স্তরে স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি-কৌশল গ্রহণ হতে পারে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বড় হাতিয়ার। তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও দায়িত্বশীল নাগরিক আচরণ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটিকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।”
যে কোনো কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিবিড় নজরদারি ও মূল্যায়ন আবশ্যক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আবার এগুলো করতে দরকার উপযুক্ত ও দক্ষ জনবল, আর্থিক বরাদ্দ। আমি এ দিকটা বিবেচনায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নের কাজটি বিশেষ অগ্রাধিকারে রাখবেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও জনবল নিশ্চিত করবেন যেন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি না হয়।”
যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এটি হবে অগ্রগতির একটি নতুন মাইলফলক। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও এসডিজি-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডাসমূহ অধিকতর দক্ষতার সাথে অর্জনে সহায়ক হবে।”
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে, বিশেষ করে ৫ অগাস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ অফিসের প্রশংসনীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা তাদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট পরিচালক থাকসাফন থামারাংসি উপস্থিত ছিলেন।