কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৭ নম্বর কেন্দ্র সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া প্রার্থী ফয়জুল করীমের গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে। এসময় তার চার সমর্থক আহত হন। সকাল ১০টার দিকে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া এ কাদের চৌধুরী স্কুল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কয়েক শ নেতা-কর্মী শহরের দুটি স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দলটি হামলা-মারধর-হয়রানি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোটারদের বাধা দেওয়া, জোরপূর্বক ভোট দেওয়ারও অভিযোগ করে।
এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।
দুই সিটির নির্বাচনে বরিশালের ঘটনাটি ছাড়া মোটামুটি সুষ্ঠুভাবেই ভোট হয়েছে। বরিশালে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ভিন্ন চিত্র ছিল খুলনায়। সেখানে শহরে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। যদি শহরতলীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অন্তত দুপুরের পর বেড়ে যায়।
দুই সিটির মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৮ জন এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৪ জন।
বরিশালের ভোটে হামলার ঘটনা ঘটলেও এমনটা শোনা যায়নি খুলনার ভোটে।
দুই সিটিতেই ইভিএমে ভোট দিতে এসে কিছু কিছু জায়গায় বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ভোটারদের কেউ কেউ। দুয়েক জায়গায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ভোট দিতে বিলম্ব হয়।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে ভোট গ্রহণ চলবে। প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ ইভিএম। এসব ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।
বরিশাল সিটির ভোটার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ঘড়ি প্রতীকের মো. কামরুল আহসান রুপন, হাতি প্রতীকের আসাদুজ্জামান ও হরিণ প্রতীকের আলী হোসেন।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জনসহ মোট ১৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে এই নির্বাচন মনিটর করছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে সার্বিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সকাল থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।