বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে কর্মসংস্থান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১১, ২০২১, ০৪:৩২ পিএম

বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে কর্মসংস্থান

গত এক দশকে অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির বিপরীতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কমেছে। আর করোনার ফলে প্রচলিত কর্মসংস্থানের সংখ্যা আরও কমে গিয়েছে। একদশকে ব্যবধানে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ৩.৩২ শতাংশ থেকে ১.৩৩ শতাংশে অবনতি হয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন খাত সৃষ্টি হলেও শীর্ষ পর্যায়ে বিদেশী কর্মকর্তারা নিয়োজিত। ১১ জুলাই (রবিবার) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘অধিকার ও পছন্দই মূল কথা: প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রাধান্য পেলে কাঙ্ক্ষিত জন্মহারে সমাধান মেলে।’

জনসংখ্যার বিপরীতে কমছে কর্মসংস্থান

২০১৩ সাল পর্যন্ত কর্মসংস্থান বাড়ছিল। তারপর থেকেই কমে যাচ্ছে। ২০০২-০৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বাংলাদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ছিল ২.২৫ শতাংশ। ২০০৬-১০ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৪৫ শতাংশে। ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত সামান্য কমে প্রতি বছর কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি নামে ২.৩০ শতাংশে। আর ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কর্মসংস্থানে প্রবৃদ্ধি হয় মোটে ১.৩৩ শতাংশ। জনসংখ্যার বোনাসকাল থাকায় ২০৪১ পর্যন্ত যখন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়বে, তখন কর্মসংস্থান কমে যাওয়া খুবই বিস্ময়কর। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ‘ন্যাশনাল জবস স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’-এর খসড়ায় এ তথ্য উঠে আসে।

বছরে বেকার বাড়ছে ১৪ লাখ

প্রতি বছর গড়ে ১৬ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরির বাজারে ঢুকলেও শিল্প খাতে নতুন চাকরি সৃষ্টি হচ্ছে বছরে প্রায় ২ লাখ। ১০ বছর আগেও শিল্প খাতে প্রতি বছর নতুন কর্মসংস্থান হতো সাড়ে ৩ লাখ মানুষের। তথ্যপ্রযুক্তিসহ নতুন কিছু খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও দেশের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মসংস্থান বাড়েনি, উল্টো ২০১৬ সালের পর থেকে কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে দেশে বেকার ২৭ লাখ। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে দেশে প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ বেকার রয়েছে।

দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কেটি

বর্তমানে দেশে ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার মানুষ রয়েছে। যার মধ্যে নারী ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার ও পুরুষ ৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৫ থেকে ৪৯ বয়সী রয়েছে ৫৪.৯ শতাংশ। সে হিসেবে দেশে প্রায় ৯ কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠি রয়েছে। 

WhatsApp Image 2021-07-11 at 5.38.19 PM

অদক্ষ ৩৫ শতাংশ জনশক্তি

দেশের কর্মক্ষম জনশক্তির ৩৫ ভাগ পড়াশোনা, কাজকর্ম ও কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই। আর শতভাগ বেকার মানুষের সংখ্যা ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৪০ ভাগই কোনো কাজ পাচ্ছে না। পুরনো এসব বেকারের সঙ্গে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছে নতুন বেকার। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির ফারাক বাড়ছে। এক যুগ আগে প্রতি ১ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিপরীতে কর্মসংস্থানের হার ছিল ০.৫৪৯৯ শতাংশ, এখন এ হার ০.১৭৬৫ শতাংশ। 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ‘ন্যাশনাল জবস স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’-এর খসড়ায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বেকারত্ব দূর করতে হলে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৯-৩০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি দেশে ১৮ লাখ ৪০ হাজার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থান কম

বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার তথ্য স্বীকার করে শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় তৈরি পোশাক খাতসহ শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। তাই শিল্পের উৎপাদন, রপ্তানি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না, উল্টো কমছে। কিন্তু দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে দেশীয় শিল্পের বিকাশ আরও বেশি প্রয়োজন। সেই তুলনায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কোন জোরালো উদ্যোগ নেই। 

স্থবির রয়েছে খাত ভিত্তিক কর্মসংস্থান

দেশের প্রধান শিল্প খাত তৈরি পোশাকেও ২০১১-১২ সময়ের পর কর্মসংস্থান বাড়ছে না। তখনো এ খাতে কর্মসংস্থান ছিল ৪০ লাখ, এখনো তাই। যদিও এই খাতের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাক খাতের মতোই খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পেও কর্মসংস্থান কমছে। ২০১৩ সালে এ খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১২ লাখ ৩০ হাজার, তা ২০১৫-১৬-তে নেমেছে ৭ লাখ ৪ হাজারে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রয়েছে নির্মাণ খাতের। ২০০৫-১০ সময়ে নির্মাণ খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি বেশ বাড়ছিল। ২০১০-১৩ সময়ে তা আবার কমে থাকে। শুধু শিল্প খাতেই নয়, ২০০৫-১৩ সময়ে সেবা খাতেও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

Link copied!