বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনেও তারা আলাদা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২, ০৬:০৯ পিএম

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনেও তারা আলাদা!

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে প্রায় খবরের শিরোনাম হয়েছেন। সোমবার শেষ কার্যদিবসেও তারা পরস্পর বক্তব্য দিয়েছেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের লেকভিউ চত্বরে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জমান উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: কিছু ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে, ইভিএমে ভোট বড় সাফল্য

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া করোনা পজিটিভ থাকায় নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেনও উপস্থিত হতে পারেননি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সিইসি জানান, মাহবুব তালুকদার অনুপস্থিত থাকছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন থাকছেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, “তিনি (মাহবুব তালুকদার) আলাদা কথা বলবেন, সেটা আপনারা নিশ্চয়ই জানবেন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”

কে এম নূরুল হুদা আরও বলেন, “গত পাচঁ বছরে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে হয়তো কিছু ভুল থাকতে পারে। তবে আমি এবং আমার কমিশন চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে।”

গত ৫ বছর নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “ইভিএমএ ভোট গ্রহণ কমিশনের বড় সাফল্য। আইনের মাধ্যমে নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা ছিল। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল, কঠোর পরিশ্রম করে সে দায়িত্ব পালন করেছি।”

২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের মধ্যে কে এম নূরুল হুদাকে সিইসি করে পাঁচ সদস্যের কমিশন নিয়োগ দেন। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন-মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন তারা। নিয়োগ পাওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

পাঁচ বছর দায়িত্বে তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সব সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করেন। সোমবার ছিল তাদের শেষ কর্মদিবস।

আরও পড়ুন: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গণতন্ত্রের লাশ পড়েছে

দীর্ঘ এই পাঁচ বছরে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে প্রায় খবরের শিরোনাম হয়েছেন। একে অন্যের দিকে তীর্যক বাক্য ছুড়েছেন সংবাদ সম্মেলনে। শুধু তাই নয় কমিশন বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভাও বেশ কয়েকবার বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার। সর্বশেষ ‘নির্বাচন আইসিউইউতে’ ও ‘গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ মন্তব্য করলে কড়া জবাব দেন সিইসি।

সোমবার নির্বাচন কমিশনের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ও মাহবুব তালুকদারের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে, তা হয়তো কেউ ভাবতে পারেনি।প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সংবাদ সম্মেলন শেষে ইসি সচিবালয়ের নিজ কক্ষের সামনে পৃথক বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে দেশে আট ধাপে সম্পন্ন হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গণতন্ত্রের লাশ পড়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

বর্তমানে আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, “ কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটি রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য।”

Link copied!