করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলমান রয়েছে। এই লকডাউনে সর্বত্র পালন করা হয়েছে বিধিনিষেদ। বিধিনিষেদ যাতে সকলেই মানে তার জন্য মাঠে আছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
কেউই জিজ্ঞাসাবাদের বাইরে নয়। ঘর থেকেই বের হলেই বলে যেতে হচ্ছে কেনো কোথায় যাচ্ছে। প্রয়োজন যদি যুক্তিপূর্ণ না হয় তবে পেতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ শাস্তি। হয় গ্রেপ্তার না হয় জরিমানা। তবে এটাও এক ধরনের ভোগান্তি বলে অভিযোগ করেন পথচারীরা।
সচেতনতার নামে চলছে ভোগান্তি এই অভিযোগ করে ফার্মাসিস্ট আবুল বাশার বলেন, ’লকডাউনেতো আমাদের অফিস করতে হয়। প্রতিদিন নাবিস্কো থেকে উত্তরায় যাতায়াত করি রিক্সায়। আগে যেখানে ৫০-৬০ টাকায় যাতায়াত হতো এখন সেখানে খরচ হয় ৫০০-৬০০ টাকায়। তার মধ্যে রয়েছে জায়গায় জায়গায় কৈফিয়ত। প্রত্যেক জায়গায় বলতে হয় কই যাচ্ছি কেনো যাচ্ছি। এটা কি ভোগান্তি না। করোনাভাইরাস নির্মুল করার মতো কোনো রোগ না। তবে এটা কোন সমাধান না। আরো ভালো সমাধান খোঁজা উচিত ছিলো’।
এই রকম আরেক ভোগান্তির কথা জানায় ব্যবসায়ী শামসু রহমান। আরেকজনের মোটরসাইকেলে আসায় তাকে ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। সে সময় তিনি বলেন, ’আমি শাহাজাহানপুর থেকে উত্তরায় যাবো। ও আমার পাশের বাসায় থাকে। ওকে অনুরোধ করে নিয়ে আসছি আমার সাথে। এখন শাহাজাহানপুর থেকে কি উত্তরায় রিক্সায় যাওয়া সম্ভব। আমরা সাধারন মানুষ, আমাদের তো নিজস্ব পরিবহন নেই। সরকারের উচিত আমাদের এই বিষয়গুলো ভেবে দেখা’।
দুইজন পরিচিত হলেও একই পরিবারের না হলে রিক্সায় চড়ার কারনে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এই রকমই জরিমানা করা হয় জান্নাত ও নুসরাত নামে দুই কলিগকে। তারা একই পরিবারের না হওয়ায় তাদেরকে ৫০+৫০/১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানাকে হয়রানি বলে দাবি করেন জান্নাত। তিনি বলেন, ’এটা এক ধরনের হয়রানী। আমরা এলিফেন্ট রোড থেকে বনানী যাচ্ছি। সে আমার কলিগ। এখন এলিফেন্ট রোড থেকে বনানী একজন রিক্সায় আসলে যে খরচ দুইজন আসলে একই খরচ। আর আমরা দুইজন একই অফিসে কাজ করি, কেনো একসাথে যেতে পারবো না। করোনার ভয় আমরাও পাই। এখন যেহেতু অফিস আছে আমাদের যাতায়াততো করতেই হবে’।
মহাখালীতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলার সময় এই রকম বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে অনেককে জরিমানা করা হয়। এই অভিযান পরিচালনা করে র্যাব ২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজাহারুল ইসলাম। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমরা একটা জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমরা প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করছি, কোথায় এবং কেনো যাচ্ছে। যারা প্রমাণ করতে পারছে যে তার কাজটা জ্রুরি তাদের কেই আমরা যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। বাকিদেরকে আমরা খুবই স্বল্পমূল্যে জরিমানা করছি।’
দুই জন একসাথে রিক্সায় চলাচল করলেও জরিমানা করা হচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আমরা দেখছি প্রতিদিন দেড়শোর উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই সংক্রমণের বৃদ্ধি কমানোর জন্য আমাদের এই জরিমানা। শুধু রিক্সা না বাইকেও আমরা একজনের বেশি অনুমতি দিচ্ছি না।’