‘মেন্দি এন সাফাদির সাথে দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন নুর’

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৬, ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম

‘মেন্দি এন সাফাদির সাথে দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন নুর’

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সাথে বৈঠক করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর। গণমাধ্যমে স্বীকার না করলেও দলটির একাধিক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে সাফাদির সাথে বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তবে কী বিষয়ে ইসরাইলি নাগরিকের সাথে নুর বৈঠক করেছেন তা দলকে জানাননি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাত বছর পর আবার ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর মেন্দি এন সাফাদির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন কি না, তা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। সাক্ষাতের খবর নাকচ করে দিয়ে নুর বলেছেন, এ সবই অপপ্রচার। তবে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সাক্ষাতকারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, “গত ১৮ জুন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ড. রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সভা হয়। সেখানে নুরুল হক নুর দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে ইনসাফ কায়েম কমিটির একটি সভায় অংশ নেওয়া ও তাদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এর জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া ইনসাফ বাস্তবায়ন কমিটির সভায় যাওয়ার ব্যাখ্যা দেন।”

তিনি আরও বলেন, “ নুর আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং প্রমাণ থাকলে তা হাজির করতে বলেন। একই সময়ে তিনি নূরের বিরুদ্ধে কয়েকটি সুস্পষ্ট অভিযোগ আনেন। যার মধ্যে মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আলোচিত বৈঠকের সত্যতা সংক্রান্ত কিছু তথ্য, আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে দলীয় তহবিল নিজে গ্রহণ ও হিসাব না দেওয়া এবং শিপন বসুসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহভাজন লোকদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ তোলেন।”

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নূর কাতারে ইসরাইলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো রকম আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন বলে জানান ফারুক হাসান।  

ফারুক হাসান আরও বলেন, “মেন্দির সাথে এ বৈঠকের আলোচ্যসূচি কী ছিল, তা তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অবগত করতে অস্বীকৃতি জানান। এমতাবস্থায় নুর দলের বয়োবৃদ্ধ কয়েকজন সৎ ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক ও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় ড. রেজা কিবরিয়া সভাস্থল ত্যাগ করেন এবং সভা মুলতবি হয়।”

গণপরিষদের এই সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, “ওই রাতেই আহ্বায়ক একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানান যে তিনি জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাচ্ছেন এবং তিনি দেশে ফিরে পুনরায় সভা ডেকে এ বিষয়ে সমাধান করবেন। কিন্তু ১৯ জুন নুর দপ্তর সমন্বয়কের মাধ্যমে নোটিশ দিয়ে আরেকটি সভা ডাকেন, যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ নয়। ওই সভায় নুরুল হক নুর নিজেই সভাপতিত্ব করেন এবং ওই সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি আবারও মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে তিনি সদস্যদের আলোচনার সুযোগ না দিয়ে আহ্বায়ককের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো উত্থাপন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব তোলেন।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ড. রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অপসারণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি না এবং তিনি দলের আহবায়ক হিসেবে বহাল আছেন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে যারা কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করেছেন তারা পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।”

ফারুক হাসান আরও বলেন, “দলের গঠনতন্ত্রের ৩৮ ধারা অনুযায়ী আহবায়কের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ ও অপসারণ করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২১ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৮১ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। কাজেই মাত্র ৪৫ জন সদস্য উপস্থিতি বিশিষ্ট সভায় আহ্বায়ককে অপসারণ করা অসম্ভব। সেই ৪৫ জনের মধেও ১২ জন রেজা কিবরিয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে দেখা যায় উল্টো ৮৩ জন  কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজা কিবরিয়ার পক্ষে।”

অধিকন্তু উক্ত সভায় সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণের আহ্বান জানালে তা না করে প্রকাশ্যে হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলা হয়। ফলে অনেকেই ভোটদানে বিরত থাকেন। কিন্তু সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিরতিতে রেজা কিবরিয়াকে দুই তৃতীয়াংশের ভোটে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক এবং প্রতারণামূলক।

রেজা কিবরিয়াকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়নি  উল্লেখ করে তিনি তিনটি দাবি জানান। যার মধ্যে রয়েছে— নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়া, জামায়াত নেতা শফিকুর রহমান, হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনল হকসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি ও পাসপোর্ট এক্সেপ্ট ইসরাইল লেখাটি পুনর্বহাল করা। দলটির নিপীড়িত ফিলিস্তিনের পক্ষে আছেন বলেও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কর্ণেল (অবঃ) মিয়া মশিউজ্জামান, যুগ্ম আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা ড.আবদুল মালেক ফরায়েজী, যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন ও জাকারিয়া পলাশ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মো. আতাউল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!