রাইড শেয়ারিং সার্ভিস: যাত্রীদের স্বস্তি নাকি ভোগান্তি!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২২, ২০২২, ১০:৫৪ এএম

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস: যাত্রীদের স্বস্তি নাকি ভোগান্তি!

রাজধানীতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। গণপরিবহনের অভাবও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। গণপরিবহনের অভাব অনেকটা কমাতে ২০১৬ সালে পাঠাও ও উবার রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে রাজধানীবাসীকে সেবা দেওয়া শুর করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এসব রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তবে এই রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো বর্তমানে যাত্রীদের কাছে ‘বড় ভোগান্তি’র বিষয়ে পরিণত হয়েছে।  জ্বালানী তেলের দাম বাড়লেও  অ্যাপে আগের ভাড়াই বিদ্যমান আছে। এর ফলে এখন বাড়ছে কন্ট্রাক্ট বা খ্যপে যাবার প্রবনতা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় দেশে বর্তমানে ১৪ টি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের নিবন্ধন রয়েছে। পাঠাও উবারের পাশাপাশি -ও ভাই, আমার বাইক, আমার রাইড  ইজিয়ার, লেটস গো, মুভ , ডাকোসহ অনেকগুলো রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান যাত্রী কিংবা চালক কারোরই আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

পাঠাও পিক আওয়ারে ১০% এবং অফ পিক আওয়ারে ১৫% কমিশন কাটে। অন্যদিকে উবার চালকদের কাছে ২৫% কমিশন কাটে। চালকদের অভিযোগ অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত কমিশন আদায় করছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের বাজারে জ্বালানী তেলের দাম বাড়লেও সেই অনুযায়ি অ্যাপের ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। ফলে দাম বৃদ্ধির বোঝা টানতে হচ্ছে চালকদের।

চালকরা জানান, গাড়ির জ্বালানী, সার্ভিসিং, চালকের দৈনিক খাবার খরচ এবং পারিশ্রমিক হিসাব করলে কোম্পানিগুলোর কমিশন কাটার পর চালকেরা খুব একটা লাভ করতে পারে না।

যাত্রীদেরও অভিযোগের শেষ নেই। তারা একদিকে পাচ্ছেন না নিরাপত্তা, অন্যদিকে শিকার হচ্ছেন নানান রকম অনিয়ম এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের।

যাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ সময় গন্তব্য শুনে অনুরোধ ক্যানসেল করে দেয় চালকরা।  চালকদের পছন্দনীয় গন্তব্য হলেই কেবল যাত্রী পরিবহন করা হয়। বিকাশে বা কার্ডে টাকা দিতে চাইলেও রাইডার যেতে চায় না। যাত্রীকে অনুরোধ ক্যানসেল করতে বাধ্য করা হয়, ফলে জরিমানা গুনতে হয় যাত্রিকে। একাধিক যাত্রীদের অভিযোগ,  সময় চালকরা ইচ্ছে করেই যেসব সড়কে যানজট থাকে সেখান দিয়ে নিয়ে যায় বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে।

এদিকে, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে সরকারি নীতিমালা সঠিকভাবে না মানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের জন্যে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার খোলা থাকার কথা থাকলেও অনেক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের তা নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় কোন অফিসও নেই বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার শর্তাবলী:

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭-এ পরিসেবাগুলো পরিচালনায় শর্ত রয়েছে মোট ৫০টি । যার মধ্যে অন্যতম হল -

১. বিআরটি ‘র কাছ থেকে সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সনদ নিতে হবে।

২. রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের টিন ও ভ্যাট সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

৩. রাইড শেয়ারিং সার্ভিস এলাকায় নিজস্ব অফিস থাকতে হবে।

৪. যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকতে হবে।

৫.প্রতিটি যাত্রা পুলিশ কন্ট্রোল রুম যেন প্রয়োজনে সরাসরি নজরদারি করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৬.রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের কল সেন্টার সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকতে হবে।

৭.অ্যাপে এসওএস সুবিধা রাখতে হবে যার বোতাম স্পর্শের সাথে সাথে মোটরযান চালকের তথ্যাদি ও যাত্রীর জিপিএস লোকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৯৯৯ নম্বরে চলে যাবে।

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত চললে আমাদের পরিবাহন খাত কতটা জনবান্ধব করা সম্ভব তা নিয়ে সন্ধিহান রয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একসিডেন্ট রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন," ছোট ছোট গাড়ি এবং মোটর সাইকেল ব্যক্তিগত গাড়ির প্রবৃদ্ধি যদি বাড়তে থাকে তাহলে পুরো ঢাকা শহরের যানজটের যে একটা চিত্র-তা আমি মনে করি একটা ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। "

গুরুতপুর্ণ সময়ে অ্যাপে রাইডার পাওয়া না গেলেও রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে খ্যাপে যেতে অসংখ্য রাইডারদের জটলা পাকিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। রাইডারদের এই জটলা পাকিয়ে বসে থাকা যানজটের একটি বড় কারণ বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন।

Link copied!