ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৩:১২ পিএম
হত্যা করেছেন স্ত্রীকে। আর এই হত্যাকে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’ চালিয়ে দিয়ে বেশ আনন্দেই ছিলেন স্বামী মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭)। এই সময়ে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কাজ করেন স্থানীয় দু-একটি গণমাধ্যমে। স্থানীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদও হয়ে যান।
তবে সত্য কখনও চাপা থাকেনা। প্রায় ১৭ বছর ধরে পলাতক থাকার পর ফেসবুক সূত্রে শনাক্ত করা হয় আশরাফকে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) জালে ধরা পড়েন এই খুনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাবার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)।শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, “২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে পারিবারিক কলহের জেরে আশরাফ তার শিশুপুত্রের সামনে শ্বাসরোধ করে নিজ স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে হত্যা করেন। হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালাতে নিহতের ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে লাশ ঝুলিয়ে দেয়।”
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে আশরাফকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার ১২ দিন পর শিশুসন্তানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শ্বশুরের সহায়তায় জামিনে বের হন। এরপর হঠাৎ করে একদিন আশরাফ আত্মগোপনে চলে যান। তখন থেকে তিনি বাড়ি, কর্মস্থল ও স্বজনদের কারো সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেননি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সানজিদা শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে প্রমাণিত হলে ২৮ এপ্রিল আশরাফকে আসামি করে সোনারগাঁও থানানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তে হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর আদালত মামলার পলাতক আসামি আশরাফের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
আশরাফ পলাতক থাকায় গত ২১ ডিসেম্বর সোনারগাঁও থানা থেকে তাকে গ্রেফতারের জন্য র্যাবের সহায়তা চাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফকে গ্রেফতারে রব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় মামলায় উল্লেখিত মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে বরিশালে একটি অভিযান চালানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার না করায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সিমটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে এটি এখন অন্যজন ব্যবহার করছেন।
এরপর র্যার সাইবার পেট্রলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশরাফের ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে এবং মাঠ পর্যায়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ফেসবুকে আসামি আশরাফের নামে দুটি পেজ পাওয়া যায়। যেখানে তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেছেন। তার ছবি স্থানীয়দের দেখালে তিনিই স্ত্রীর খুনি আশরাফ বলে নিশ্চিত হয় র্যাব। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।