‘রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনেই বরখাস্ত হন সেই টিকেট পরীক্ষক’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৮, ২০২২, ০১:৫৮ এএম

‘রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনেই বরখাস্ত হন সেই টিকেট পরীক্ষক’

বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ওঠে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর একজন ইমরুল কায়েস প্রান্তর মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলছেন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ফোনের পরই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) বরখাস্ত হয়েছেন। নিপা মন্ত্রীপত্নীর মামাতো বোন।

শনিবার নিপা আক্তার গণমাধ্যমকে আরও বলেছেন, ছেলেদের সাথে ‘অসদাচরণ’ করার কারণে টিটিইকে তিনি বদলি করতে মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে বলেছিলেন। তখন শাম্মী তাঁকে জানান, বদলি না বরখাস্তই করে দিচ্ছি। সাথে সাথে তিনি রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বরখাস্ত করতে বলেন।

তবে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ওই তিন যাত্রীকে তিনি চেনেন না।

এ বিষয়টি শনিবার সারাদিনই টক অব দ্য কান্ট্রি ছিল। পরে একে একে বেরিয়ে আসে মন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর পরিচয়ও। তাঁরা তিনজনই রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের নিকটাত্মীয়। ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া মো. ইমরুল কায়েস রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তারের ছেলে।

ঘটনার রাতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার ও ইয়াসমিন আক্তার একসাথেই ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইয়াসমিন আক্তার। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমরুল কায়েসদের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের নূর মহল্লায়। তাঁর সাথে অপর যে দুজন ছিলেন, তাঁরা হলেন শাম্মী আক্তারের মামাতো ভাই ফারুক হোসেন ও হাসান আলী। ইমরুল কায়েস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত।

ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ৫ মে রাতে তাঁর ছেলে টিকিট না পাওয়ায় নুরুল আলম নামের রেলওয়ের এক সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (এসিও) ফোন দেন শাম্মী আক্তার। রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর পরিচয় পেয়ে স্টেশনমাস্টার টিকিট করতে হবে না বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার আত্মীয়ের টিকিট করতে হবে না।’ সে কারণেই ইমরুল কায়েস টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন। পরে তাঁদের সম্মান দেখিয়ে এসি কামরায় বসানো হয়।

ইয়াসমিন আক্তারের দাবি, ওরা (তিন যাত্রী) একটু আরামের জন্য এসি কামরায় বসেছিলেন। ট্রেন ছাড়লে টিটি এসে ছেলেদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তিনি ছেলেকে ‘ট্রেন কি তোর বাপের’ বলে গালি দেন। রাত তিনটার দিকে ছেলে ফোন দিয়ে এসব জানালে তাঁরা শাম্মীকে ফোন দেন। পরিচয় পাওয়ার পরও টিটিইর এই আচরণে শাম্মী রেগে গিয়ে রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিটিও) ফোন দিয়ে টিটিইকে বরখাস্ত করতে বলেন। পরে তিনি টিটিইকে বরখাস্ত করেন।

ঘটনাটি নিয়ে সমালোচনার মুখে শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেছিলেন, ওই তিন যাত্রী তাঁর আত্মীয় নন। তিনি তাঁদের চেনেন না।

এ প্রসঙ্গে ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর রেলমন্ত্রী আমাদের চেনে না বলায় কষ্ট পেয়েছিলাম। দুপুর একটার দিকে তিনি (রেলমন্ত্রী) নিজেই ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আপা, আমি যা বলেছি, এতে মন খারাপ করবেন না। জনগণ সবাই আমার কাছে সমান। তাই বলেছি। বিষয়টা আমি দেখছি।’’

এদিকে এ ঘটনায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। আগামী সোমবার তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রবিবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলামকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৫ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে তিন যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তাঁরা ট্রেনের এসি কামরায় বসেছিলেন। তাঁদের কাছে ভাড়া চাইলে টিটির সাথে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ওই তিন যাত্রী নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাঁদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। ওই তিন যাত্রী শোভন কামরাতেই ঢাকা পৌঁছান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মুঠোফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।

Link copied!