বাংলাদেশ-ভারতের প্রকল্প, চুক্তি বা সমঝোতা কি পুনর্বিবেচনা হতে পারে?

জাতীয় ডেস্ক

আগস্ট ২০, ২০২৪, ০২:২৯ পিএম

বাংলাদেশ-ভারতের প্রকল্প, চুক্তি বা সমঝোতা কি পুনর্বিবেচনা হতে পারে?

ছবি: সংগৃহীত

গত দেড় দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি যে দেশের নাম সামনে এসেছে সেটি  ভারত।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সাল থেকে ছয় বছরের মতো ভারতেই কাটিয়েছেন। এখনও তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ভারতেই।

কিন্তু তাতে করে বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি বা প্রকল্প ভারতের রয়েছে সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে ভারতে একটা অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে।

কিন্তু, বাংলাদেশের সাথে ভারতের অনেক ধরনের প্রকল্প, চুক্তি এবং সমঝোতা রয়েছে। করিডোর সমঝোতা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে আদানি গ্রুপকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া, বেশি খরচ, ক্যাপাসিটি চার্জের মতো দিকগুলোও দেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে দেখেন অনেকে। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও ছিল সমালোচনা। এখন এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করে তরুণ প্রজন্মও।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, “২০০৮ এর নির্বাচনটা বাদ দিলে বাকি তিনটা নির্বাচনেই কিন্তু ভারত সরকারকে নানাভাবে খুশি করে এবং নিজের ক্ষমতাটাকে দীর্ঘায়িত করার একটা বাসনা আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল। সেই জায়গা থেকে এমন চুক্তিগুলোই এখানে হয়েছে যেখানে বাংলাদেশ কোনও ভাবে লাভবান হয়নি। লাভের যে ভাগ সেটার পুরোটাই আসলে ভারতের পকেটে গেছে। সেই চুক্তিগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারের নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে এখন।”

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে কী-না সে প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজের জন্য কিছুটা সময় দরকার। এখন আসলে এমন একটা পরিস্থিতি চলছে যে, যতটা সম্ভব সরকারকে পুরোপুরি সচল করে তোলা। এর পরের পর্যায়ে খুব তাড়াতাড়ি আমরা সবগুলি নিয়ে বসবো।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ট্রান্সপারেন্সিতে (স্বচ্ছতায়) বিশ্বাস করি, যা যা কিছু সম্ভব বা চুক্তি যেগুলো মানুষের জানার অধিকার আছে, সেগুলো আমরা অবশ্যই পাবলিক করবো।”

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেছেন, “যেসব চুক্তি নিয়ে সমালোচনার জায়গা রয়েছে তা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ কতটা রয়েছে সেটা নির্দিষ্ট চুক্তিতে কী আছে, তার ওপরই নির্ভর করে। সাধারণত সমঝোতা স্মারকের আইনগত বাধ্যবাধকতার জায়গা থাকে না, যা চুক্তির ক্ষেত্রে থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “যখনই একটা চুক্তি সম্পাদন করা হয়, তখনি কিন্তু তাতে লেখা থাকে যে কোনও একটা পার্টিকুলার পরিস্থিতিতে এ চুক্তিটা প্রযোজ্য হবে না কারো জন্যই। আরও যেমন এক্সিট ক্লসে থাকে যে, যদি এখানে কোনও ধরণের এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশন হয় তাহলে এটা কারও ওপরেই অ্যাপ্লিকেবল হবে না।”

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, “প্রত্যেকটা চুক্তিতে বিভিন্ন ধরণের এক্সিট ক্লস থাকে। তো ভারতের সাথে যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, এটার এক্সিট ক্লসগুলো কী আছে সেগুলো খুব কেয়ারফুলি দেখতে হবে। যদি এক্সিট ক্লস ফেভারেবল না থাকে, তাহলে কিন্তু সেই চুক্তিগুলো চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

এদিকে, ভারতের বিশ্লেষকরা মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে ভারত অতি মাত্রায় শুধু আওয়ামী লীগের উপরই নির্ভর করেছে। যে কারণে এখন তাদের জন্য আগের মতো সহজ পরিবেশটা আর নেই।

তবে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবেই। কিন্তু সেটা সামনের দিনে ঠিক কেমন হবে এবং এখন কী ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে সেটা পরিষ্কার হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

Link copied!